আইয়ুব বাচ্চু 

(জন্ম: ১৯৬২; মৃত্যু: ২০১৮) 

আইয়ুব বাচ্চু | ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি, সুরের যাদুকর, জনপ্রিয় ব্যান্ডদল এলআরবির ভোকাল পটিয়ার কৃতি সন্তান
ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি, সুরের যাদুকর, এলআরবির ভোকাল পটিয়ার কৃতি সন্তান আইয়ুব বাচ্চু 

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। গিটারের জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল তার। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামেও পরিচিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন।

শৈশব থেকেই তিনি গান শুনতেন প্রচুর। একসময় নিজেও গাইতে শুরু করেন। এরপর শুরু করেন গিটার চর্চাও। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন, পরে অবশ্য এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাট নানা অনুষ্ঠানে তাদের এই ব্যান্ডদল গান করতো। পরে বন্ধুরা যে যার মতো একেক দিকে ছড়িয়ে পড়লেও ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে তার সংগীত জীবনের পথচলার শুরু হয়। 
এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন ‘সোলস’ ব্যান্ডে। এই ব্যান্ডের লিডগিটার বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’।

রূপালী গিটার ফেলে চলে গেলেন পটিয়ার কৃতি সন্তান কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।  ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পটিয়া উপজেলার ১৭ নং খরনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইসহাক ও মরহুম নুরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান আইয়ুব বাচ্চু। ব্যস্ততার কারণে গ্রামের বাড়িতে না আসলেও আত্মীয়-স্বজনের নিয়মিত খোঁজ রাখতেন তিনি। 

আইয়ুব বাচ্চু | ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি, সুরের যাদুকর, জনপ্রিয় ব্যান্ডদল এলআরবির ভোকাল পটিয়ার কৃতি সন্তান
লাইভ অনুষ্ঠানে ব্যান্ডদল এলআরবির সাথে আইয়ুব বাচ্চু

আইয়ুব বাচ্চুর দাদা মরহুম হাজী নুরুজ্জমান সওদাগর। মোজাফফরাবাদ এন.জে. উচ্চ বিদ্যালয়, কৃষি অফিস, তফসিল অফিস, খরনা বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, খরনা রেল স্টেশনসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের জমি দাতা তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর দাদা হাজী নুরুজ্জমান সওদাগরের স্বপ্নের একটি হাসপাতাল শীঘ্রই প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে ছিল গুণী এই শিল্পীর; কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার মেনে থেমে গেল সেই স্বপ্ন। 

১৮ অক্টোবর ২০১৮ সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন গুণী এই শিল্পী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। 

আ্রইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারী মন’ (১৯৯৬), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘যুদ্ধ’ (২০১১), ‘স্পর্শ’ (২০১৩)। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ হলো তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সব গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)। 

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি। 
রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। বেশকিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানও জনপ্রিয়।

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

• আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন। ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না। কিছু বিষয় বিস্তৃত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য পোস্ট করছে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।