![দক্ষিণ চট্টগ্রামে লোডশেডিং চরমে; দূর্ভোগে লক্ষাধিক গ্রাহক দক্ষিণ চট্টগ্রামে লোডশেডিং চরমে; দূর্ভোগে লক্ষাধিক গ্রাহক; পটিয়া; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg0PLlOZYN7RSi6X164eybIAz25UJtmtojvbMCXrbpdEeypuUjQ-mwT8tzVz7cQ78fhhAulbscD6Jl_H6Ls5dD3UyO5tGP7AKBfWZVZnCyfJsWYhwqhYeU7qlHo7ZhB4aKfiiAtzjJ_nTMk/s16000/loadshedding.jpg) |
দক্ষিণ চট্টগ্রামে লোডশেডিং চরমে; দূর্ভোগে লক্ষাধিক গ্রাহক |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ দেশ জুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। ফ্যানের বাতাস কিংবা বরফের পানি পান করেও রেহাই পাচ্ছেন না জনগণ। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ লোডশেডিং। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা! দিন-রাত মানছে না, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং।
তীব্র তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা খালের পাড়ে নির্মিত শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুইটি ট্রান্সফরমার অগ্নিকান্ডে নষ্ট হওয়ার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সচল হয়নি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে অব্যাহত লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার লক্ষাধিক গ্রাহক। পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় দৈনিক ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং চলছে।
এছাড়া এ দূর্ঘটনার পর থেকে পিডিবি কর্তৃপক্ষ পটিয়া উপজেলায় পার্শ্ববর্তী দোহাজারী সাব ষ্টেশন থেকে বিকল্প সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসলেও গত সোমবার দোহাজারী সাব ষ্টেশনের ৩৩ কেবি লাইনে অতিরিক্ত লোডের কারণের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পটিয়ায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকে। ফলে পটিয়ার প্রায় ২০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এতে গ্রাহকদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
তাছাড়াও পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় গ্রাহকদের জন্য প্রতিদিন ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা থাকলেও বর্তমানে পাচ্ছে ৪ মেগাওয়াট। পিডিবির আওতাধীন পটিয়া উপজেলায় প্রতিদিন ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে ৬ মেগাওয়াট।
এদিকে পটিয়া পিডিবির বিদ্যুৎ সঞ্চালন যন্ত্রগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পরায় নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত দৈনিক ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পটিয়ার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জানান, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩০-৩৫ বার লোডশেডিংয় হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবসা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এভাবে যদি লোডশেডিং হয় তা হলে পটিয়া পৌরসদরের ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে পোল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ১৩২ কেভির একটি ও ১৯৮৬ সালে চীন থেকে আমদানীকৃত ১৩৩ কেভির একটি সহ মোট দুটি ট্রান্সফরমার শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বসানো হয়। এই দুই ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে পটিয়া সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত ৩০ আগস্ট শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শর্টসার্কিট থেকে দুটো ট্রান্সফরমারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একটি ট্রান্সফরমার সম্পূর্ণ বিনষ্ট ও অন্যটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে ঐদিন বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পটিয়া সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলা, বান্দরবান পার্বত্য এলাকা ও কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনীর ৭ টি ইউনিট দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও দুটি ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাত ১০ টার দিকে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাচঁটি উপজেলায় দোহাজারী সাব ষ্টেশন থেকে বিকল্প সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
এ ঘটনার পরের দিন পিডিবি কর্তৃপক্ষ রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল খালেককে প্রধান করে ঐ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী কানাই চন্দ্র দাশ ও সহকারী প্রকৌশলী (নিরাপত্তা) আবুল বাশারসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে পটিয়ার পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী আবু সাইদ জানান, ‘শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের পর থেকে বিকল্প বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন হিসেবে পটিয়া এলাকায় দোহাজারী সাব স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছিল। দোহাজারী লাইনের অতিরিক্ত লোডের কারণে ৩৩ কেভি ভোল্টের তার ছিঁড়ে যায়। ফলে পটিয়ায় ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো।’
শিকলবাহা বিদ্যুকেন্দ্র প্রধান ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ভূবন বিজয় দত্ত জানান, ‘অগ্নিকান্ডে বিনষ্ট হয়ে যাওয়া দুটো ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি মেরামত করে বসানো হবে। আরেকটি নতুন ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ চলছে। এজন্য এনার্জী প্যাক কোম্পানীকে ৭০ এমভি ট্রান্সফরমারের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে। তারা অতি শীঘ্রই এ ট্রান্সফরমারের সরবরাহ করবে। এতে করে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা যাচ্ছে।’