|
দক্ষিণ চট্টগ্রামে পেয়ারার বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ চলতি মৌসুমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষি অফিস ও পেয়ারা চাষীরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা সরবরাহ করে থাকেন। এখন পর্যন্ত কোনো হিমাগার বা পেয়ারা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে অনেক কম দামে পেয়ারা বিক্রয় করে দিতে হয় বলে জানায় পেয়ারা চাষীরা। এতে পেয়ারা চাষীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রায় তিন হাজার ছয় শত একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে। এ বছর চাষ আরো বেড়েছে। লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া উপজেলায় ছোট-বড় পেয়ারার বাগান রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ টির মত। বেশিরভাগ বাগান গড়ে উঠেছে পাহাড়ে। যার বেশিরভাগের অবস্থান চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর. ছৈয়দাবাদ, রায়জোয়ারা, ধোপাছড়ি, দোহাজারী শঙ্খ নদী পাশ ঘেষে; পটিয়া উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, খরনা, কচুয়াই ইউনিয়নের শ্রীমতি খাল পাশে; বাঁশখালী উপজেলার, কালীপুর, বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা পাহাড়ে; এছাড়াও সাতকানিয়া উপজেলার পদুয়া, বাজালিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার পূর্বাংশের পাহাড় এবং সমতল ভূমিতে পেয়ারা চাষ করা হয়।
গত বছরে চাইতে এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে বিশ্বে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে কাজী, আঙ্গুরি, বাউ ও কাবিরি— এ চার জাতের পেয়ারা বেশি পাওয়া যায়। এ এলাকার হাজার হাজার একর বনভূমিকে যদি পেয়ারা চাষের আওতায় আনা যায়, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ পেয়ারা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, পটিয়া ও চন্দনাইশের অধিকাংশ পেয়ারার মাঝেখানে লাল আবরণ থাকে। দেশজুড়ে এ লাল পেয়ারার খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া কিছু বাগানে ১২ মাস পেয়ারা পাওয়া যায়। কৃষক এই পেয়ারাকে বারোমাসি পেয়ারা নামে ডাকেন। তবে চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার পেয়ারা সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। তাই দেশজুড়ে এর প্রচুর চাহিদাও রয়েছে।
পেয়ারা চাষী একাধিক কৃষক বলেন, ‘শুধু মাত্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে বছরে ৪০ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়। সরকার বা কৃষি বিভাগ পেয়ারা চাষীদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি। বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ পেয়ারা চাষীদের।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামের এ অপার সম্ভাবনাময় পেয়ারা চাষে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এ অঞ্চলের পেয়ারাচাষী ও ব্যবসায়ীরা।
পেয়ারা চাষীরা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো হিমাগার বা পেয়ারা সংরক্ষণের সরকারীভাবে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে পেয়ারা চাষীদের অত্যন্ত কম দামে পেয়ারা-লেবুসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রয় করে দিতে হয়। এতে পেয়ারা ও সবজিচাষীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। ’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১৩টি স্পটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পেয়ারা বেচাকেনা হয়। হাটে আসা পেয়ারা চাষীরা জানান, শুধু রওশন হাটে প্রতিদিন এক হাজার বারেরও বেশি পেয়ারা বিক্রি হয়। পটিয়ার কমল মুন্সীর হাট, চন্দনাইশ উপজেলার বাদমতল, গাছবাড়িয়া খান হাট ও বাগিচা হাটে চাষিরা পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা নিয়ে আসেন ভারে করে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে ব্যাপারীদের হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায় এই পেয়ারা। বংশপরম্পরায় পেয়ারা চাষ ও বিক্রিতে নিয়োজিত এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শুধু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাই নন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ক্রেতারা ছুটে আসেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই পেয়ারা বাজারগুলোতে। এক একটি পেয়ারা খুচরা বাজারে ২ থেকে ৮ টাকায় পর্যন্ত বিক্রয় হতে দেখা যায়।
চন্দনাইশ উপজেলার পেয়ারা চাষী কৃষক কামাল বলেন, আমি নিজের ৩০০ শতক জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। যাতে বাগান সংখ্যা হচ্ছে ৮টি। এতে পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। একটি বাগান থেকে ২-৩ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা সম্ভব বছরে। বর্তমানে প্রতি ভার পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়। এক ভারে ৫০০ থেকে ৬০০ পেয়ারা থাকে।
পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা ও তৌফিক হোসেন খান ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘পটিয়া ও চন্দনাইশে সবচাইতে বেশি পেয়ারা উৎপাদিত হয়। এ বছর উৎপাদন অনেক ভালো। তবে বাগান পরিচর্যা ও অন্য কতিপয় বিষয়ে মনোযোগ দেয়া গেলে এ উপজেলাগুলোতে পেয়ারার উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। বাংলাদেশে যে কয়টি পেয়ারার জাত রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে চন্দনাইশ ও পটিয়ার পেয়ারা বেশি সুস্বাদু। এই অঞ্চলের পেয়ারা চাষীদের দাবির কথা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা বলেন। তবে সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণের জন্য এই এলাকায় একটি হিমগারের প্রয়োজন রয়েছে।’
পেয়ারা বিষয়ে ডাক্তাররা বলেন, ‘দাঁতের ব্যাথার জন্য পেয়ারা খুব উপকারী। পেয়ারা গাছের ছাল ও শেকড় আমাশয়ের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মুখের রুচি বাড়াতে পেয়ারা খুব ভালো। পেয়ারার পুষ্টির সাথে রয়েছে ভেষজগুণও। একটি পেয়ারাতে রয়েছে একটি কমলার চাইতে চারগুণ বেশি ভিটামিন সি। তাই বিশ্বজুড়ে পেয়ারার গুণি ফল হিসাবে স্বীকৃতি রয়েছে।