একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনে চট্টগ্রাম দক্ষিণের চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনের প্রার্থীদের দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ব্যবসায়িক সফলতায় সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সামশুল হক চৌধুরী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ব্যবসা থেকে নিজের বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ৫ লাখ ৬০ হাজার ৫১০ টাকা। তবে গত ২৮ নভেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায় ব্যবসায়িক আয় দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে তার আয় বেড়েছে ৮ গুণেরও বেশি। ফলে নগদ টাকার সমাগমও বেড়েছে অনেকখানি। হলফনামায় বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ আয় দেখিয়েছেন ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৯০ টাকা। অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৩২ লাখ ৮২ হাজার ৩৮৭ টাকা। স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৬৪ লাখ ১০ হাজার ৪১২ টাকা।
৯ম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সামশুল হক চৌধুরীর হাতে নগদ টাকা ছিল মাত্র ১ হাজার ৩৬৯ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৭ টাকা। স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ২ হাজার ২৪৪ টাকা এবং মূলধন হিসেবে ২৩ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ টাকা। তবে সর্বশেষ হলফনামায় ২১ হাজার ৯১১ মার্কিন ডলারসহ তাঁর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৯৪১ টাকা। একই সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণও বেড়েছে ৫২ লাখ ২০ হাজার ৭৫৫ টাকা।
অপরদিকে পটিয়া আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দুজন। এর মধ্যে এগিয়ে আছেন এনামুল হক এনাম। চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোঃ এনামুল হক এনাম ব্যবসা থেকে গত বছর আয় করেছেন ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ টাকা। আর বাড়ি ভাড়া থেকেও তিনি আয় করেছেন ১৫ লাখ ৫ হাজার ৯০০ টাকা। হাতে নগদ ১০ লাখ টাকা থাকলেও এনামুল হকের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ১ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। বিস্ফোরক দ্রব্য ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পটিয়া ও কোতোয়ালী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে।
চূড়ান্ত প্রার্থী
এদিকে বিএনপির আরেক প্রার্থী কানাডা প্রবাসী গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৬৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৮১ টাকা। নগদ টাকা দেখিয়েছেন নিজের নামে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৪ টাকা, স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৪ হাজার টাকা, ছেলের নামে ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা; ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা হিসেবে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬০৩ টাকা, কৃষি/অকৃষি জমির আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ভাড়াটিয়ার নিকট হতে অগ্রিম ঋণ দেখিয়েছেন ৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৯০ টাকা।
অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে
ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন চৌধুরী ব্যবসাখাত থেকে আয় দেখিয়েছন ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২১ টাকা, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ লাইফ ইন্সুরেন্স ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৩২৩ টাকা, বন্ড/শেয়ার ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, কৃষি/অকৃষি জমি ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৭০ টাকা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুদ্দীন মোহাম্মদ ইউনুচ কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবু তালেব হেলালী ব্যবসাখাত থেকে আয় দেখিয়েছন ৩ লাখ টাকা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানতে দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকা, নগদ ৫ লাখ টাকা, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৫০ হাজার টাকা, কৃষি/অকৃষি জমি ৮ কানি ৬ গন্ডা।
পটিয়ার বহিরাগত প্রার্থীদের মধ্যে
এনায়েত বাজার, কোতোয়ালী নিবাসী ইসলামী ফ্রন্টের এম.এ. মতিন ব্যবসাখাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৪ টাকা, কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ১৬ হাজার ৭৬০ টাকা, নগদ টাকা ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ টাকা; স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষি/অকৃষি জমির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬০ টাকা, বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
ষোলশহর নিবাসী এলডিপির নাহিদ ফারহানা আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নগদ টাকা হিসেবে ৪ লাখ ৩ হাজার ৪০৯ টাকা, অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৯ টাকা।
ডেমরা, ঢাকা নিবাসী ইসলামী আন্দোলনের দেলাওয়ার হোসেন সাকী চাকুরী খাত হতে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। নগদ টাকা হিসেবে দেখিয়েছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫৯ টাকা। স্থাবর/অস্থাবর সম্পদের কোন মূল্য দেখাননি।
আন্দরকিল্লা নিবাসী বিএনএফ এর দীপক কুমার পালিত বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার টাকা, ব্যবসাখাত থেকে ৩ লাখ টাকা, পেশাখাত থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ টাকা। নগদ টাকা হিসেবে দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৫ টাকা, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। কৃষি/অকৃষি জমির মূল্য হিসেবে ৪০ লাখ টাকা, দালান/বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ৩১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।