পটিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

পটিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য | History & Traditions of Patiya


          ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৪৫ সালে পটিয়ায় একটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৪ সালে এটিকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১৯৩০ এর দশকে এখানে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী, বিশেষতঃ যুগান্তর দল ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন অভিযানের সাথে জড়িত বিপ্লবীরা এখানে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে কালারপোল সংঘর্ষে বিপ্লবী স্বদেশ রায় ইংরেজ সেনাদের গুলিতে নিহত হন। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে গৈড়লা গ্রামে বিপ্লবী দলের অধিনায়ক সূর্যসেন ও ব্রজেন্দ্রসেন ইংরেজ সেনাদের হাতে ধরা পড়েন।


১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর দুটি বোমারু বিমান পটিয়া সদরে কয়েকদফা বোমা হামলা চালিয়ে অনেক বেসামরিক লোককে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৩মে মুজাফফরাবাদ গ্রামে পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদর সদস্যরা অসংখ্য ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।

১৯২৯ সালে পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী আবদুল গফুর হালী। তাঁর লেখা অসংখ্য আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারী গান সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয়। আবদুল গফুর হালীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মেঠো পথের গান’। 


           ষষ্ঠ শতকে পটিয়াসহ সমগ্র চট্টগ্রাম সমতট রাজ্যভুক্ত হয়। সপ্তম শতক অবধি সমতটের খড়ুগ রাজবংশের রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়। অষ্টম শতকে ধর্মপালের রাজত্বকালে তা পাল সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। নবম শতকে পটিয়াসহ চট্টগ্রাম আবার হরিকেল রাজ্যভুক্ত হয়। দশম শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময় অর্থাৎ ১৬৬৬ সন পর্যন্ত সাময়িক বিরতি থাকলেও চট্টগ্রাম সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল আরাকান রাজ্যভুক্ত ছিল। বৌদ্ধযুগে চট্টগ্রাম ‘চক্রশালা’ নামে বহির্বিশ্বে পরিচিত ছিল। এ চক্রশালা পটিয়া সদর থেকে দুই মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। আরাকান শাসকরা চক্রশালায় তাদের রাজধানী স্থাপন করে। রাজা মেং ফালোং (সেকান্দার শাহ) এর শাসনকালে (১৫৭১-৯৩ খ্রি.) ‘চক্রশালা’ রাজধানী ছিল যেখানে চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশ ও কক্সবাজার তার দখলে ছিল। পটিয়াসহ পুরো চট্টগ্রাম মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয় সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের আরো ৯০ বছর পূর্বে ১৬৬৬ সনে তার প্রপৌত্র সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে। ব্রিটিশ শাসনের আগে এতদঞ্চল আরাকান আমলে ‘চক্রশালা’, মোগল আমলে ‘চক্রশালা পরগণা’ এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে ‘চাকলা’ নামেই পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ চট্টগ্রামের কেন্দ্র পটিয়ায় ১৯১০ সালে ৫ জন মুন্সেফ নিয়ে মহকুমা মুন্সেফ কোর্ট স্থাপন করে এবং তদানীন্তন পাঁচ থানার প্রশাসনিক কার্য পরিচালনার জন্য একজন সার্কেল অফিসার (ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট) নিয়োগ করে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পটিয়ার ও রাউজানের কিছু অংশ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে পটিয়াকে ভেঙে ১৮৯৮ সালে আনোয়ারা, ১৯৩০ সালে বোয়ালখালী ও ১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ এবং সর্বশেষ ২০০০ সালে পটিয়া উপজেলার অধীনে কর্ণফুলী থানা গঠিত হয় (পরবর্তীতে এসব থানাকে উপজেলাতে উন্নীত করা হয়)। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান আমলে পটিয়া মহকুমা (জেলা) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পটিয়াকে মহকুমা থেকে উপজেলাতে পরিণত করা হয়।  

              বাঙালি জাতির ইতিহাসে যে ক’টি বীরত্ব গাঁথা রয়েছে সে সবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বীরত্বগাঁথা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পৃথিবীর খুব কম জাতি রয়েছে, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য প্রাণদিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের সুবাদেই বাঙালি জাতি শত শত বছর পরাধীনতার শৃঙ্খলে থাকার পরও বীরের জাতিতে পরিণত হয়েছিল। এই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে বীর প্রসবিনী পটিয়া। বৃটিশ শাসনামল হতে শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসর পটিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ছিল অগ্রভাগে। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম তথাকথিত 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার' অন্যতম আসামী বিভূষি ভূষণ চৌধুরী প্রকাশ মানিক চৌধুরী ছিলেন পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের সূর্যসন্তান (এই সূর্য সন্তানের জন্য আমরাও গর্বিত)। ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও সুলতান কুসুমপুরী বিজয়ী হওয়ার পর হতেই মূলত ঐতিহাসিক পটিয়া আন্দোলন সংগ্রামে মুখরিত হয়ে উঠে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের সেই কালো রাতে যখন বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকায় নিরস্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, ওই ঘটনা আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে প্রথম বিদ্রোহকারী ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী সেনা ক্যাপ্টেন অলি আহমদ, মেজর জিয়াউর রহমান ও তাঁর সাথীরা ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখলে নেন। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬ মার্চ তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ২৭ মার্চ পুনরায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে `I, Major Ziaur Rahman, do here by declare the Independence of Bangladesh, On behalf of our great national leader the supreme commander Sheikh Mujibur Rahman'  বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে পটিয়াবাসী তথা সারা দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়। (তথ্যসূত্র: কর্ণেল অব. ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম) 
সেদিন ঝাউতলা রেলস্টেশনসহ চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিহারী কর্তৃক বাঙালি নিধনের সংবাদেও পটিয়াবাসী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। পটিয়ার জাতীয় পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইলাম চৌধুরী, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, আবুল মাসুদ চৌধুরী, নুরুন্নবী, অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ, শামসুদ্দিন আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী,অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন দাশ, অধ্যাপক শামসুল ইসলামসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে পটিয়াবাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। পটিয়ার সর্বস্তরের জনতা সেদিন পূর্ববাংলার স্বাধীনতার নেশায় উম্মাদ হয়ে উঠে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ভারতে গিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। অনেকে দেশের অভ্যন্তর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে। মুষ্ঠিমেয় কিছু স্বাধীনতা বিরোধী থাকলেও মূলতঃ পটিয়া ছিল স্বাধীনতাকামী মুক্তি পাগল জনতার দুর্ভেদ্য দূর্গ। সম্ভবত একমাত্র পটিয়া’ই ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত হানাদার মুক্ত তথা স্বাধীন ছিল।

পটিয়াবাসীর রাজনৈতিক সচেতনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথাটি বুঝতে পেরে যুদ্ধের প্রথমদিকেই পাকিস্তানী বিমানবাহিনী ১৪ এপ্রিল শুক্রবারে পটিয়া সদরে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। সেদিন প্রায় অর্ধশতাধিক লোক শহীদ হন। যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানী বাহিনীর এই বর্বরতা পটিয়াবাসীকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জোগায়। মুক্তিযুদ্ধে শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী মেজর জিয়াউর রহমান ও তৎকালীন পটিয়ার সন্তান ক্যাপ্টেন অলি আহমদ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র পতনের পর পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন গ্রামের আমিন শরীফ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন অলি আহমদ ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

পটিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে অনেকের নাম আজ মনে না থাকলেও কিছু মুক্তিযোদ্ধার ও সংগঠকের নাম আজও স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে। তাদের মধ্যে এ্যাডভোকেট জালালউদ্দিন আহমদ চৌধুরী, এস.এম ইউসুপ, আহমদ শরীফ মনির, ধীরেন দাশ, মোহাম্মদ মহসিন, আহমদ নবী, মাহফুজুর রহমান খান,আবদুস ছালাম, শামসুদ্দিন আহমেদ, আবদুল বারিক, প্রফেসর শামসুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, ফজল আহমদ চৌধুরী, দিলীপ কান্তি দাশ, শাহ আলম, অনিল নালা, আবুল কাশেম, ফজলুল হক, আবদুস শুক্কুর, আবু তাহের বাঙালি, মুক্তিমান বড়ুয়া, মাওলানা এমদাদ, ফজল আহমদ, নূর মোহাম্মদ, শহীদ সুবেদার আবদুস ছালাম, মরহুম মোজাহেরুল হক, আ.জ.ম. সাদেক,কাজী আবু তৈয়ব, মহিউদ্দিন, একেএম আবদুল মতিন, প্রদ্যুৎ পাল, চৌধুরী মাহবুব, ইউসুপ খান, শিরু বাঙালি, আবদুস ছবুর, মোহাম্মদ আসলাম, মো: রফিক খান, রফিক আহমদ, ফেরদৌস চৌধুরী, আবু তাহের, সোলেমান কমান্ডার, সোলায়মান খান, আবদুল হক, স্বপন চৌধুরী, আবুল হাশেম মাস্টার প্রমুখের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। 
চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ক্যাপ্টেন করিমের নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি পটিয়ার অধিবাসী না হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার নাম ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে শহীদ হয়েছিলেন। বিনিনিহারার ডা. শামসুল আলম ও গৈড়লার আহমদ হোসেন মাস্টার মুক্তিযোদ্ধাদের যাবতীয় সহায়তা করতেন বলে জানা যায়। এ দু’জনের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে সুপরিচিত ছিল।

পটিয়ার মুক্তিযুদ্ধে মিলিটারী পুলের পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধের কথা মনে হলে আজও গা শিউরে উঠে। সেপ্টেম্বর সংঘটিত এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানীদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের আক্রমণের মুখে পেরে না উঠে মুক্তিযোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছিলেন; সে যুদ্ধে হুলাইনের সোলেমান কমান্ডার, সোলায়মান খানসহ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের পর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ক্রোধান্বিত হয়ে পুরো সেনেরহাট জ্বালিয়ে দেয় এবং হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের শত শত ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। সেদিন হানাদার বাহিনীর সাথে দেশীয় অনেক রাজাকারও অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়। সেদিন চরকানাই ফুলতলে হুলাইনের শামসুল আলম পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। পটিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মোজাফফরাবাদ হত্যাকান্ড বেদনার স্মৃতি হিসেবে আজীবন সকলের মনে থাকবে। পাক বাহিনী মোজাফফরাবাদে সেদিন শতাধিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করেছিল।

পটিয়ার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতি হয়ে আছে ধলঘাট, গৈড়লার টেক ও জিরি মাদ্রাসার যুদ্ধ। যে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের সন্ত্রস্ত্র করতে পেরেছিলেন। পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা খাসমহল আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। আক্রমণ করেছিলেন লাখেরার ওয়্যারলেস সেন্টার। মনসার টেকে রাজাকার কর্তৃক স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনা যুদ্ধের বেদনাবহ স্মৃতির অন্যতম। 
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ের একদিন সকালে হুলাইন গ্রামের মানুষ হতচকিয়ে গিয়েছিল। কেননা এর আগের দিন রাত্রে গ্রামের প্রায় কয়েক’শ কিশোর-তরুণ একযোগে যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়েছিল। এতগুলো ছেলের একযোগে গ্রাম ত্যাগে পুরো গ্রাম জুড়ে কান্নার রোল উঠেছিল। যাকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে চিহ্নিত করা যায়। সেদিন যারা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিল তাদের মধ্যে নুরুল হাকিম, মরহুম কিবরিয়া, ইউসুপ খান, মরহুম হারুনুর রশিদ, সাইফুল্লাহ রফিক,আনোয়ারুল ইসলাম, হারুন খান, নুরু, সোলায়মান খান প্রমুখের নাম এখনও মনে আছে। সেদিন তাদের সাথে অগ্রজ মরহুম শফি খানও চলে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র যোগাড় করতে পারেননি। হুলাইন গ্রামের তৎকালীন ছাত্রলীগের সদস্য এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান খান সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ইনফরমার তথা সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করতেন মরহুম আ.জ.ম. নুরুল আলম মাস্টার, মোজাফফর আহমদ, নেছার আহমদ চৌধুরী, জাফর আহমদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সেবাশুশ্রুষাঃ- পার্শ্ববর্তী বোয়ালখালী থানার খিতাপচর গ্রামের আলতাফ নামের একজন ইপিআর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা পার্বত্য অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরবর্তীতে তাঁকে গোপনে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি প্রায় ২০ দিন থাকার পর সুস্থ হয়ে চলে গিয়েছিলেন।

১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্থানী বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে, তখন সারাদেশের মতো পটিয়াতেও আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। পটিয়ার সর্বত্র বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ১৭ ডিসেম্বর হাবিলাসদ্বীপ হাই স্কুলের মাঠে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় দিবস উদযাপন করেন। তিনটি এলএমজির সাহায্যে ফাঁকা গুলি ছুড়ে সেদিন উৎসবের সূচনা করা হয়েছিল।


Keep updated with us via www.facebook.com/VoiceofPatiyaOfficial

পটিয়া সম্পর্কে আরও জানতে




পটিয়া সম্পর্কে আরো জানতে ও জানাতেআমাদের ফেসবুক পেজের সাথেই থাকুন

আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ইমেইলে (contact@voiceofpatiya.com) ফেসবুক মেসেঞ্জার (https://m.me/VoiceofPatiyaFans / https://m.me/VoiceofPatiyaOfficial) ঠিকানায়।

    2 comments so far,Add yours

    ~ মন্তব্য নীতিমালা ~

    • আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন। ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

    • জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

    • আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না। কিছু বিষয় বিস্তৃত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

    • কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

    • বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না।

    • যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য পোস্ট করছে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

    • ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।