"স্বাস্থ্য" ক্যাটাগরীর সকল আর্টিকেল
স্বাস্থ্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

করোনাঃ ১৩ জানুয়ারী থেকে বিধিনিষেধ-মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক-আসনের অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে গণপরিবহন; করোনা; করোনা ভাইরাস; করোনা ভ্যাকসিন; কোভিড-১৯; Covid-19; Covid; Corona; Vaccine
করোনাঃ ১৩ জানুয়ারী থেকে বিধিনিষেধ-মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক-আসনের অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে গণপরিবহন

ভয়েস অব পটিয়া-ন্যাশনাল ডেস্কঃ করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে আগামী ১৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। 

আজ সোমবার ১০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিধিনিষেধ সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এই রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৩ জানুয়ারি হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিম্নবর্ণিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলোঃ- 

১। দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যতায় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে। 

৪। ১২ বছরের উর্ধ্বে সব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫। স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহের ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধুমাত্র ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। 

৬। ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে।

৮। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯। সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেবে।

১০। করোনায় আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। 

১১। কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এই বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন
অবিক্রিত লাল চিনি, বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের মানবেতর জীবন; রাজশাহী, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম, ভারত, বাংলাদেশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, চিনি, আখ, রাষ্ট্রায়াত্ত মিল, সুগার মিল, brown sugar, sugar mill, white sugar

ভয়েস অব পটিয়া-ন্যাশনাল ডেস্কঃ রাষ্ট্রায়াত্ত চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত লাল চিনি বিক্রি না হওয়ায় গত ৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না চিনিকল শ্রমিকরা। যার ফলে বেতনহীন মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে রাজশাহী-ঠাকুরগাঁওয়ের লাল চিনিকলে উৎপাদনকারী শ্রমিকদের।

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে ৫৪ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে প্রায় ৩ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি টন চিনির মিল গেটে মূল্য ৬০ হাজার টাকা। কর্পোরেশনের নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেসরকারি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চিনির বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিনি বিক্রি না হওয়ার ফলে ৪ মাস ধরে বেতন বন্ধ শ্রমিকদের। যার ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তারা।

বাংলাদেশ চিনি শিল্প কর্পোরেশনের ডিলাররা জানায়, ‘বেসরকারি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চিনি কেজি প্রতি মূল্য ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয়াত্ত চিনিকলের উৎপাদিত চিনির মিল গেট মূল্য কেজি প্রতি ৬০ টাকা হওয়ায় আমরা অল্প পরিমাণে চিনি বিক্রির জন্য সরবরাহ করছি। বেসরকারি শোধনাগারের সাদা চিনি প্রতি গ্রাহকদের পছন্দ থাকায় বাজারে রাষ্ট্রীয় কলের উৎপাদিত লাল চিনির চাহিদা কম বলে মনে করছেন ডিলাররা। যার ফলে বেশিরভাগ চিনিই চিনিকলে অবিক্রিত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও আখ চাষি সমিতির সভাপতি ইউনুস আলী বলেন, ‘প্রতি বছর আখ সরবরাহ করার পর আখের মূল্য দিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। যথাসময়ে আখের মূল্য পরিশোধ এবং বাজারে লাল চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলে নতুন ভোক্তা তৈরি হবে, এতে কৃষক এবং মিলগুলোও লাভবান হবে।’

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের চিনি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। চিনি বিক্রির গতি খুব ধীর হওয়ায় তাদেরকে সময়মতো বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে মানবেতন দিন কাটাতে হচ্ছে চিনিকল শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোকে বাঁচাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চিনি তৈরির উপকরণের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়াতে হবে। যাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত চিনির বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চিনি বিক্রি করতে না পারে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় চিনিকল প্রতিষ্ঠানগুলোসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার-হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা রক্ষা পাবে’ বলেও মনে করেন তিনি।

সাদা চিনি খেয়ে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার বিকলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন না তো?

আসুন জেনে নিয়ে লাল চিনি ও সাদা চিনির মধ্যে পার্থক্য

•  লাল চিনি হলো সরাসরি আখ থেকে তৈরি অপরিশোধিত চিনি। লাল চিনিতে থাকে আখের সব উপাদান। যেমনঃ- শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থায়ামিন, রাইবোফ্লেবিন, ফলিক এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। 

লাল চিনির উপকারী কয়েকটি দিকঃ-
১) প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লাল চিনি খেলে হাড় শক্তপোক্ত হয়। সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়। 

২) আখের অ্যাটিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। 

৩) লিভার সুস্থ রাখে। 

৪) জন্ডিসের প্রকোপ কমায়। 

৫) কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করে। 

৬) আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 
৭) শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। 

৮) শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু লাল চিনি রিফাইন বা পরিশোধন করতে গিয়ে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। চিনি পরিশোধন করতে ব্যবহার করা হয় সালফার এবং হাড়ের গুঁড়ো। 

সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে সম্পর্কে ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন এক গবেষণাপত্র বের করেছিলেন। 
ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণাপত্রে বলেনঃ- ‘চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।’

ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণা লব্ধ ফলাফল প্রমাণ করে- রিফাইন করা চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। হার্ট ও কিডনী ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। 

সাদা চিনির ক্ষতিকারক দিক 


১) যেহেতু পরিশোধনের সময় চিনির মিনারেল বা প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান দূর হয়ে যায়। তাই সহজেই বলা যায়, এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। নিউরন কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়। যা স্ট্রোক ঘটায়। 

২) ভিটামিন সরিয়ে ফেলায় শরীর পুষ্টি উপাদান পায় না। 

৩) সাদা চিনিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে। ফ্রুক্টোজ হজম করাতে সাহায্য করে লিভার বা কলিজা। কিন্তু অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভার হজম করাতে না পারায় লিভারে তা ফ্যাট আকারে জমা হয়। এতে করে লিভার ড্যামেজ বা লিভার নষ্ট হয়ে যায়।

৪) চিনি পরিশোধনে ব্যবহার হয় সালফার আর হাড়ের গুড়ো যা কিডনি বিকলাঙ্ক করে দেয়। 

৫) সালফার ইনসুলিন নিঃসরণে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস হয়। 

এত এত অপকারী বা বিধ্বংসী দিক থাকার কারণেই ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন সাদা চিনিকে বলেছেন বিষ। 

আমাদের দেশের মানুষ টাকা দিয়ে ধবধবে সাদা বিষ খাবে তবুও লাল চিনি কিনবে না! নিজে তো মরছেন, দেশীয় চিনিকলের শ্রমিকদেরও বিনাবেতনে মারছেন!

আসুন সবাই লাল চিনি কিনি, নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি দেশ ও দশের কথা চিন্তা করি।
পটিয়ায় অজ্ঞাত রোগে মরছে ফার্মের মুরগী, রোগাক্রান্ত মুরগী কমদরে বিক্রির অভিযোগ; পটিয়া; ইউনিয়ন; আশিয়া; মুরগী; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram
পটিয়ায় অজ্ঞাত রোগে মরছে ফার্মের মুরগী, রোগাক্রান্ত মুরগী কমদরে বিক্রির অভিযোগ

ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ পটিয়ায় অজ্ঞাত রোগে মরছে বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মের মুরগী। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছে অনেক খামারি বলে জানা যায়। 
অভিযোগ উঠেছে, খামারিরা লোকসান পুষিয়ে নিতে রোগাক্রান্ত প্রতিটি মুরগী ৫০ টাকা দরে গ্রামের লোকজনের কাছে বিক্রি করছে। 

এদিকে প্রতিদিন এক ফার্ম থেকে অন্য ফার্মে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 
উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নাধীন পোল্ট্রি ফার্মের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে এলাকার বেশ কয়েকটি ফার্মের মুরগী মারা গেছে। একের পর এক ফার্মে অজ্ঞাত এ রোগ ছাড়াচ্ছে। এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মুরগী মারা গেছে শুধু আশিয়া ইউনিয়নে। অজ্ঞাত রোগে মুরগী মারা যাওয়ায় এ শিল্পে ধস দেখা দিয়েছে। রোগ নির্ণয় করতে না পারায় ফার্মের মুরগীর মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। এতে ফার্ম মালিকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে বলে সূত্র জানায়। 

ক্ষতিগ্রস্ত ফার্ম মালিকরা জানান, বেশিরভাগ ফার্মের মুরগী হলুদ রং-এর মল ত্যাগ করে এক থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু ফার্মের মুরগী প্রথমে ঝিমাচ্ছে, খাবার খাচ্ছে না। এসব মুরগী সাদা ও রক্তমাখা পাতলা মল ত্যাগ করে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে। ফার্ম মালিকদের ধারণা, বার্ড ফ্লুর মতো কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব মুরগী মারা যাচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোগাক্রান্ত এসব মুরগী প্রতিটি ৫০ টাকা দরে গ্রামের লোকজনের কাছে বিক্রি করছে খামারিরা। এ কারণে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে- এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কিছু ফার্মের মালিক মরা মুরগী মাটিচাপা না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখছে। যার ফলে গৃহপালিত ছাড়াও বিভিন্ন পশু-পাখি এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ফার্মের মালিকদের অবহেলা ও সময়মত ভ্যাকসিন না দেয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। নিয়মিত ভ্যাকসিন না দিলে আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময়ে ঠান্ডা-গরম এবং ধূলোবালিতে আক্রান্ত হয়ে মুরগীর মধ্যে সিআরডি, সিসিআরডি এবং রাণীক্ষেত রোগের সংক্রমণ ঘটে। হয়ত এসব ফার্মের মুরগীর বেলায় তাই ঘটেছে। 

ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ তারেক জানান, তিনি কয়েকটি মুরগী দেখেছেন। এতে তার মনে হয়েছে বার্ড ফ্লু নয়, এসব মুরগী অবহেলার কারণে রাণীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ভ্যাকসিন দেয়া না হলে এবং রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ নিয়মে না হলে এই আবহাওয়ায় এমন রোগের প্রকোপে আক্রান্ত হতে পারে।
রুটি-পরোটা নরমে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যামোনিয়াম সালফেট-ইউরিয়া সার; রুটি; পরটা; অ্যামোনিয়াম সালফেট; ইউরিয়া; ঢাকা; চট্টগ্রাম; সারাদেশ; নিরাপদ খাদ্য; ভেজাল
রুটি-পরোটা নরমে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যামোনিয়াম সালফেট-ইউরিয়া সার

ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ রুটি কিংবা পরোটা সকালের নাস্তায় কিংবা হালকা ক্ষুধায় অনেকেরই পছন্দ। দামে কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই অনায়াসে ঘরের কাছের দোকান থেকে নান রুটি কিংবা পরোটা দিয়ে সকাল-বিকেলের নাস্তার পর্ব সেরে ফেলেন। কিন্তু এই রুটি-পরোটা এতো নরম কেন? কারণ, এতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত অজৈব সারের এক ধরনের মিশ্রণ! হোটেল-রেস্তোরার কর্মীর ভাষায় এর নাম ‘সাল্টু’। শুধু তাই নয় এটি এখন পাওয়া যায় মশলার দোকানেও। অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং ইউরিয়া সার একসঙ্গে মিশিয়ে গুঁড়ো করে এই সাল্টু বানানো হচ্ছে। 
সরকারী সংস্থা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এই রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। 

লবণের মতো দেখতে দানাদার এই রাসায়নিক পদার্থ নান রুটি, পরোটা, বন রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে অহরহ। সাল্টু নামক এই সার রুটি-পরোটা তৈরির আগে আটার খামিতে মিশিয়ে রাখা হয়। তারপর ভাজা হয় রুটি কিংবা পরোটা। এতে পরোটার ওপরের অংশ মচমচে হলেও ভেতরটা হয় নরম। একই উপায়ে বানানো হয় নান রুটিও। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ার একটি ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি দিয়ে নজরে আনেন এক এক্টিভিস্ট। তিনি পোস্টে লেখেন, ‘নির্বাচনি কাজে কুড়িগ্রাম গিয়েছিলাম। ফেরার পথে রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী বাজারে ভোরে নাস্তা করতে গিয়ে দেখতে পাই হোটেলের পরোটা অনেক নরম। এতো নরম কেন? জিজ্ঞেস করায় হোটেলের কর্মচারীর উত্তর, “পরোটায় সাল্টু আছে।” সাল্টু কী? জিজ্ঞেস করায়, সামনে ভান্ড আনতেই দেখি তার ভেতর রয়েছে অ্যামোনিয়া সারের গুঁড়ো। ভান্ডের মুখ খুলে সামনে ধরে শ্বাস নিতে গিয়ে দেখি দম বন্ধ হয়ে আসছে। বালিয়ামারী বাজারে তিনটি হোটেলেই সাল্টু নামের অ্যামোনিয়া সারের ব্যবহার দেখেছি। কুড়িগ্রাম থেকে জামালপুর পর্যন্ত আসতে নানা হোটেলে চা পানের জন্য নেমেছি। সবখানেই সাল্টুর ব্যবহার সম্পর্কে হোটেল মালিকরা অবগত। কেউ স্বীকার করছেন, কেউ করছেন না।’ 

সাল্টু
‘কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে এই জিনিস দেখে, ঢাকায় ফিরে নানান হোটেলে নরম পরোটা ও তন্দুর রুটির খোঁজে নেমে দেখি কেউ সাল্টুর বিষয়টি স্বীকার করছে না। মোহাম্মদপুরে দুটি হোটেলের দুই কর্মচারী আভাসে-ইঙ্গিতে বিষয়টি স্বীকার করলেন। তাদের ভাষ্য, ‘রুটি বা পরোটা নরম চায় কাস্টমাররা, তাই অ্যামোনিয়া সারের এই সাল্টু নামের মিশ্রণের ব্যবহার চলছে। পুরনো ঢাকায়ও একই কারবার, কেউ স্বীকার করছে না। টেবিল বয়দের পটিয়ে টিপস দিয়ে জানা গেল, সাল্টুই ব্যবহার হচ্ছে পরোটা ও তন্দুরি নান নরম করতে।’

ঢাকার কয়েকটি রেস্তোরাঁর কর্মচারী মুখ খুললেও অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি। রাজধানীর রায়ের বাজার, হাজারীবাগ, লালবাগসহ রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি হোটেলের কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা মিলেছে। পুরনো ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের একটি হোটেলের রুটির কারিগর জানান, সাল্টু না দিলে কাস্টমার রুটি শক্ত কেন জানতে চায়। তারা মনে করে বাসি রুটি গরম করে দেওয়া হয়েছে। সাল্টু ব্যবহার করলে রুটি বেশি ফোলে এবং ভেতরটা নরম হয়। রাজধানী ঘুরে আরও জানা যায়, রাস্তার পাশের খাবার হোটেলগুলোতে চিকেন বন বিক্রি করা হয়। আটার খামির ভেতর সামান্য মশলা ঢুকিয়ে দিয়ে তেলে ভেজে সাজিয়ে রাখা হয়। এই বনরুটি তৈরির খামিতেও ব্যবহার করা হয় সাল্টু। যার কারণে চিকেন বনের ভেতরটা খুব নরম হয়। 

সাল্টুর বদলে ‘ব্রেড ইমপ্রুভার’ কেন ব্যবহার করা হয় না? জানতে চাইলে রায়েরবাজার এলাকার এক রেস্তোরার ম্যানেজার জানান, বিদেশি জিনিসের দাম বেশি। এটি সস্তায় পাওয়া যায়, তাই সবাই এটিই ব্যবহার করে। এটা তো শুধু আজ থেকে না, অনেক দিন ধরেই সবাই ব্যবহার করে। তবে সাল্টু নামক এই সার কোত্থেকে সংগ্রহ করা হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারের মশলার দোকানে খোলা পাওয়া যায়। আবার অনেক বেকারিতে স্টক করেও অ্যামোনিয়া রাখা হয়। শুধু রুটি জাতীয় খাবার নয়, বেকারির সামগ্রী, যেমন– বিস্কুটেও অ্যামোনিয়ার ব্যবহার করার সত্যতা পাওয়া গেছে। 

২০১৬ সালে অ্যামোনিয়ার সবচেয়ে বড় স্টক ধরা পড়ে চট্টগ্রামের বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির কারখানায়। তাদের তৈরি বিস্কুটে মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পেয়েছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে বনফুলের কারখানা থেকে ৮৩ বস্তা অ্যামোনিয়া জব্দ করা হয়। প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি অ্যামোনিয়া ছিল। পরে সেগুলোকে ধ্বংস করা হয়।

এরপরও পুরান ঢাকার শহীদনগরে অনেক বেকারিতে অভিযান চালিয়ে তাদের পণ্যে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘বেকারিতে এই অ্যামোনিয়ার ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। আমরা পুরনো ঢাকার শহীদনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকশ’ বস্তা বিস্কুট ধ্বংস করেছি।’ 

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করে। নিরাপদ খাদ্য আইনের ৩০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে– ‘কোনও ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোনও ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রবিধান দ্বারা বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনও আইনের অধীন নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক বা বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পশু বা মৎস্য-রোগের ঔষধের অবশিষ্টাংশ, হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক বা বৃদ্ধি প্রবর্ধকের অবশিষ্টাংশ, দ্রাবকের অবশিষ্টাংশ, ওষুধপত্রের সক্রিয় পদার্থ, অণুজীব বা পরজীবী কোনও খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবেন না বা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোনও খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ, বিপণন বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।’ 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবিরের কাছে রুটিতে সারের প্রয়োগ সম্পর্কে অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যতটুকু শুনলাম, সাল্টু হচ্ছে অ্যামোনিয়াম সালফেট সার। অসম্ভব এসিডিক এই সার। যতটুকু ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, মনে হচ্ছে অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং ইউরিয়া সার একসঙ্গে মিশিয়ে গুঁড়ো করে সাল্টু বানানো হচ্ছে। তার মানে আমরা সাল্টু নামে খাদ্যের সঙ্গে দুটি রাসায়নিক সার খাচ্ছি। অনেকদিন আগে সোডিয়াম সাইক্লামেট বা অবৈধ ঘন চিনি ধরতে গিয়ে বের করেছিলাম ঘন চিনির সঙ্গে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার মিশিয়ে পুরান ঢাকা, ইসলামপুর, মৌলভী বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মগেট মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ল্যাব পরীক্ষা করে দেখেছিলাম ঘন চিনির সঙ্গে ম্যাগনেসিয়াম সার মেশানোর কাহিনী।’ 
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের দৃষ্টিতে আছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। এগুলো অবৈধভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধেও অভিযানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগিরই প্রত্যেককে ধরা হবে। খাবারের বিষয়ে কোনও আপস নেই। ইতোমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষা করা হবে।’

পুষ্টিবিদরা বলছেন এ ধরনের রাসায়নিক সার মিশ্রিত খাবার খেয়ে প্রাথমিকভাবে পেট খারাপ হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
ড. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট ডায়েটিশান সুকৃতি সামিরা বলেন, ‘এই ধরনের রাসায়নিক মিশ্রিত খাবার খেয়ে প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে কিংবা ফুড পয়জনিং। এছাড়া ক্যানসার ও চর্মরোগ হতে পারে। অনেক সময় এই খাবারগুলো লিভারকে অকার্যকর করে দেয়। আজকাল ক্যানসারটা খুব বেশি হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই এই ঝুঁকিতে আছে।’
পটিয়ায় ডাক্তারের অবহেলায় এ্যাম্বুলেন্সে সন্তান প্রসব!; পটিয়া; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram
পটিয়ায় ডাক্তারের অবহেলায় এ্যাম্বুলেন্সে সন্তান প্রসব!

ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্ক: পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সের অবহেলায় সন্তান প্রসবের মুুহুর্তে প্রসূতি রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে মাঝপথে এ্যাম্বুলেন্সে সন্তান প্রসব হওয়ার চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।

প্রসূতির নাম সাবরিনা সুলতানা নিপা। তিনি পটিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

জানা যায়, সন্তান সম্ভাবা সাবরিনা সুলতানা নিপার গত রবিবার সন্তান প্রসবের দিন ধার্য্য ছিল। প্রসব বেদনা শুরু হলে ঐদিন বেলা ১টায় তাকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে তার অবস্থা ভাল বলে তার স্বামীকে জানায়। স্বাভাবিক ডেলিভারী হওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু বিকেল ৫টায় কর্তব্যরত ডাক্তার তার স্বামীকে জানায়, এখানে ডেলিভারী করা সম্ভব নয়, তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে। এতে তার স্বামী তৌহিদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে ডেকে ভাড়া করতে চাইলে, সে অপারগতা প্রকাশ করে। অতঃপর কয়েকজনের অনুরোধে সে রাজী হয়। সে সময় রোগীর চরম প্রসব বেদনা শুরু হয়। প্রসব বেদনার মধ্যেই তাকে অনেক কষ্টে অন্য এ্যাম্বুলেন্সে তুলে সাড়ে ৫টায় চমেক হাসপাতালে রওনা হন। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের কাছাকাছি পৌঁছালে এ্যাম্বুলেন্সে বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। এ্যাম্বুলেন্সে সাথে থাকা মহিলারা উপায়ান্ত না দেখে তাকে তড়িঘড়ি করে চাঁন্দগাও আবাসিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা করে। সাবরিনা সুলতানার পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। 

এ ব্যাপারে ভুক্তভুগীর স্বামী তৌহিদ জানান, ‘নার্সদের চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে আমার স্ত্রীর সন্তান পটিয়া হাসপাতালে প্রসব না করিয়ে তাকে চমেকে প্রেরণ করেছে।’ 

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পপ কর্মকর্তা ডাঃ শিশির কুমার রায় থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তিনি সে সময় জরুরী বিভাগে দায়িত্বে ছিলেন না। সে সময় ডা. সিম্পল দে, ডা. জেবুন্নেছা কোরেশীর দায়িত্ব ছিল বলে জানান। ’
ডা. জেবুন্নেছার সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘রোগীর অবস্থা ভাল ছিলো না তাই তাকে চমেকে রেফার্ড করেছি।’
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা; পটিয়া; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা

ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্ক: নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; এতে ভেঙে পড়েছে পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য সহকারীদের কাছে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। ইউনিয়ন ভিত্তিক নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের চেনেন না স্থানীয় লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বদলে ডাক্তারদের বাসা আর ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা মিলছে টাকার বিনিময়ে। 

জানা গেছে, পটিয়ার ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র সমূহে অনেক চিকিৎসক নিয়মিত বসেন না। টিকাদান কেন্দ্রগুলোর কার্যত কোন অস্তিত্ব নেই, লোকজন চেনেন না স্বাস্থ্যকর্মীদের। 
স্থানীয়রা জানান, ১৫ দিনে কিংবা মাসে এক থেকে দুই বার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের দেখা মেলে। তা ছাড়া তাদের দেখা পাওয়া ভার। 

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ৬৬ টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কাজের (আইপিসি) দায়িত্বে আছেন ৩২ জন স্বাস্থ্য সহকারী। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অধিকাংশ লোকজন এসব টিকাদান কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের চেনেন না। কোন কোন ওষুধের দোকানে টাকার বিনিময়ে সরকারী টিকা ও ওষুধসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানে হাসপাতাল থেকে একটি সিন্ডিকেট সরকারী বিভিন্ন ওষুধ ও টিকা দোকানে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

আশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুল কাসেম জানান, ‘ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে ডাক্তার এলেও টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ মেলে।’ 
দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসেম চৌধুরী জানান, ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না আসার বিষয়ে টিএইচও’র কাছে বার বার অভিযোগ করার পরও কোন সুরাহা হয়নি। তারা কোন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীকেও চেনেন না। 
জুলধা ইউনিয়নের নাজিম উদ্দিন জানান, ‘তারা কখনো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীকে দেখেন নি। ইউনিয়নের কোথায় এবং কোন সময় টিকা দেয়া হয় বা টিকাদান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত তাও তারা জানেন না। তবে কোন কোন ফার্মেসিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন সরবরাহকৃত সরকারী টিকা ও ওষুধ পাওয়া যায়।’

উপজেলা হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের সেবা প্রদান তদারকি করার জন্য চার জন পরিদর্শক (এইচআই) ও ১৩ জন সহকারী পরিদর্শক (এএইচআই) রয়েছেন। এদের অধিকাংশ কর্মকর্তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন না। কোন কোন কর্মকর্তা মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে গেলেও শুধুমাত্র ট্যালি খাতায় স্বাক্ষর করে নিজ বাসায় ফিরে যান। 

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাসমত আলী জানান, ‘জরুরী বিভাগে এখন বিশ টাকার নিচে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে অপদস্থ করা হয় এবং সুচিকিৎসা দেয়া হয় না। এছাড়া এ বিভাগের জন্য সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত হাসপাতাল সহকারীরা পদস্থ কর্মকর্তাদের বাঁধার কারণে কাজ করতে পারছে না। তারা বিনা কাজে প্রতিমাসে বেতন তুলছেন।’
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী জানান, ‘বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাবের লোকজন জরুরী বিভাগে সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। এর মাধ্যমে তারা টাকা আদায় ও এ বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের মাধ্যমে নিজেদের ল্যাবের প্যাডে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা লিখিয়ে নিচ্ছেন এর মাধ্যমে প্রতি মাসে এসব ল্যাব থেকে মোটা অংকের কমিশন পাচ্ছেন। এছাড়া এ বিভাগসহ অফিস সময়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভরা তাদের ওষুধ লেখানোর জন্য ভিড় করেন। বিকাল গড়ালে জরুরী বিভাগ তাদের দখলে চলে যায়। অনেক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ রাতভর গল্পগুজব আর নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লেখানোর কাজ সারেন। হাসপাতালের বাইরে রাতে এসব মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভের সারি সারি মোটর সাইকেলের দেখা মেলে।’

ভুক্তভোগী ও রোগীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শিশির কুমার রায় যোগদান করার পর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম, দুর্নীতি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। পটিয়া হাসপাতালে ৩ টাকা এন্ট্রি ফির স্থলে ২০ টাকা, টিকা প্রদানে ১০/২০ টাকা ও রোগীদের সপ্তাহে ৩ দিন মাছ, ৩ দিন মুরগী মাংস, ১ দিন খাসীর মাংস দেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন সস্তা মূল্যের বয়লার মুরগী দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ঠিকাদারকে এ সুযোগ করে দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে জামাল উদ্দিন নামে এক মানবাধিকার কর্মী জানান। এ ব্যাপারে টিএইচওর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি রহস্যজনকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ধমক দেন।

পটিয়ার হাইদগাঁওয়ের মৃত আশরাফ আলীর পুত্র শওকত ওসমান অভিযোগ করেন, গত ২৬ জুন বিকেল ৫ টায় তার নাতনীকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করেন। সনাক টিআইবি পটিয়ার আহবায়ক সাংবাদিক এস এম এ কে জাহাঙ্গীরের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘পটিয়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা অবারিত করার জন্য আমরা বার বার উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেও সফল হতে না পারায় খুবই খারাপ লাগছে। আমরা আশা করব অবিলম্বে এ অনিয়ম দূর করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।’

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টিএইচও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লিখিত ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এসময় অভিযুক্ত ২ এন্ট্রি সহকারী তার পাশে অবস্থান করলেও তিনি নূন্যতম সৌজন্যতা বোধ থেকেও তাদেরকে অনিয়ম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ না দিয়ে উল্টো অভিযোগকারীকে মিথ্যা বলছেন বলে ধমক দেন মর্মে ভুক্তভোগী ফজলুল হক জানান।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সরফরাজ খানের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়েস অব পটিয়া’কে জানান, ‘তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পটিয়ার সাংসদ ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘হাসপাতালের অনিয়মে যেই জড়িত হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সরফরাজ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে শত শত ভুক্তভোগীরা তাকে ঘেরাও করে অভিযোগ করেন, তিনি এ বিষয়ে তাদের ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দেন।