মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ)

(জন্ম: ১৯৩৮; মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩)


মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) | বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার হাতেখড়ি যাদের হাতে মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) তাদের অন্যতম
মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) | Harun Islamabadi | পটিয়ার কৃতি ব্যক্তিত্ব | Illustrious Personalities of Patiya

মাওলানা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ- এর দ্বিতীয় সভাপতি। বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাধারার হাতেখড়ি যাদের হাতে মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) তাদের অন্যতম। বেফাকুল মাদারিসকে কেন্দ্র করে তিনি দেশব্যাপী ইসলামী শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। 

মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী (রহিঃ) ১৯৩৮ সালে পটিয়ার আশিয়া গ্রামের এক ধার্মিক ও অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বড় ভাইদের কাছে নিজগৃহে কোরআন মাজিদে হতেখড়ি তাঁর। পটিয়ার ভাটিখাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর নিজ গ্রামের মাদরাসা এমদাদুল উলুম আশিয়াতে জামাতে (দাহুম) বেহেশতি জেওর পর্যন্ত পড়েন। এরপর বড় ভাই শায়খুল হাদিস মাওলানা ইসহাক গাজী (রহিঃ)-এর তত্ত্বাবধানে পটিয়া জমিরিয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাসায় (পটিয়া মাদ্রাসা) জামাতে নাহুমে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে পটিয়া মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন এবং একই মাদ্রাসায় তিনি উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন করেন। 

জ্ঞান অর্জনে ছিল তাঁর অদম্য স্পৃহা আর ঐকান্তিক অধ্যবসায়। ছিল উচ্চশিক্ষা লাভের প্রবল আগ্রহ। মিসরের ঐতিহাসিক আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা ছিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে সব ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের আপত্তির মুখে তিনি এ সফর বাতিল করে দেন। 

১৯৬১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে গিয়ে পুনরায় দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হন। কিন্তু বিশেষ কারণে সেখানে থাকতে না পারায় লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়ায় গিয়ে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। ১৯৬২ সালে লাহোরস্থ জামিয়া মাদানীয়ায় বিশেষ দু’জন দার্শনিক শিক্ষকের কাছে ফুনুনাতে আলিয়ার উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা-দীক্ষা ও আধ্যাত্মিক জীবনে তিনি প্রথমে মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ ইউনুছ আবদুল জব্বার (রহিঃ)-এর নিকট আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর আশরাফ আলী থানভী (রহিঃ)-এর সর্বশেষ প্রতিনিধি, মাওলানা শাহ্ আবরারুল হক সাহেবের কাছে মুরিদ হন। 

১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে এসে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহিঃ) এঁর সঙ্গে লেখালেখি শুরু করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত একমাত্র উর্দু দৈনিক পাসবান-এ অনুবাদকের দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন। 
১৯৬৫-৬৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেন। বাংলা ভাষায় উলামাদের একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। ধর্মদ্রোহীদের মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হন। কয়েকজন বিশিষ্ট মুরুব্বীর অভিভাবকত্বে আন্দোলনের ঢাকার মুখপাত্র হাছান আনসারীর মাধ্যমে পটিয়া মাদ্রাসায় যান। তৎকালীন মুহতামিম হাজী সাহেবের কাছে পৌঁছালে তিনি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। 

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরবর্তী ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রাম বাবুনগর আজিজুল উলূম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। পাশাপাশি মাসিক আত-তাওহীদের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। 
১৯৭৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত-আবুধাবিতে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত এ.ডব্লিউ. শামসুল আলমের তত্ত্বাবধানে আরবী, ইংরেজি, বাংলা অনুবাদকের সরকারী দায়িত্ব লাভ করেন। 
১৯৭৭ সালের ১ মার্চ সুপ্রিম শরীয়া কোর্ট-আবুধাবিতে অনুবাদক পদে নিয়োজিত হন। ইতোমধ্যে ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত খতিব পদে এবং ১৯৮৫ সালে আবুধাবির বেতারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রযোজক ও উপস্থাপকের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। পরে অনুবাদ-বিভাগীয় প্রধান পদে উন্নীত হন। 

১৯৯২-১৯৯৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাকের) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে ‘রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর পক্ষ থেকে তাঁকে বাংলাদেশ শাখার পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাঁর গুণ-জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, দ্বীনের প্রতি দরদ, ইসলামী জাগরণের আন্তরিক অনুভূতি ও কালজয়ী যোগ্যতার সমাহার দেখে পটিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন মুহতামিম হাজী সাহেব তাঁর প্রতি আগের চেয়ে আরো বেশি স্নেহশীল ও আস্থাবান হয়ে পড়েন। হাজী সাহেবের ইন্তেকালের পর পটিয়া মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও মজলিসে শুরার সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর কাঁধে অর্পিত হয় আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব। 

১৯৯১ সালে পটিয়া মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯২ সালে মহাপরিচালকের দায়িত্বভার অর্পিত হয়। কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারী স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ধারায় তিনি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁর লালিত স্বপ্ন। কওমী শিক্ষাধারার স্বকীয়তা বহাল রেখেই স্বীকৃতি গ্রহণে তিনি উদ্যোগী ছিলেন। 

ক্ষণজন্মা এ আলেম  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে পরপারে পাড়ি জমান। পটিয়া মাদ্রাসার জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।


আমাদের ফেসবুক পেজের সাথেই থাকুন

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

• আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন। ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না। কিছু বিষয় বিস্তৃত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য পোস্ট করছে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।