কবি শশাঙ্কমোহন সেন

কবি শশাঙ্কমোহন সেন
কবি শশাঙ্কমোহন সেন



বাংলায় তুলনামুলক সমালোচনা-সাহিত্যের জনক কবি শশাঙ্কমোহন সেন ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে ১ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ব্রজমোহন সেন মাতা বিশ্বেশ্বরী দেবী। ধলঘাটে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে শশাঙ্কমোহন সেন ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সংস্কৃতিতে অনার্সসহ বি.এ.পাস করেন ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। পরে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রিপন কলেজ থেকে বি.এল. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রামের জজকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে মনিকুন্তলা দাশকে বিয়ে করেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ওকালতি পরিত্যাগ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপকরূপে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে নয় বছর শিক্ষকতা করেন। পান্ডিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক তাঁকে গোপাল দাশ চৌধূরী রিডার হিসেবে সম্মানিত করে। বি.এ. পড়ার সময় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সিন্ধু সঙ্গীত(১৮৯৪) প্রকাশিত হয়। আইন পড়ার সময় শৈলসঙ্গীত, এবং ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে নাটক সাবিত্রী প্রকাশিত হয়। তাঁর অসাধারণ কীর্তি বাণীমন্দির-প্রায় একহাজার পৃষ্ঠার তুলনামুলক সমালোচনা গ্রন্থটি মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর সমালোচনা ‘বাণীপন্থা’ প্রতিভা, বিজয়া,নব্যভারত,গৃহস্থ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তা কখনোই গ্রন্থকার রূপ লাভ করেনি। অন্যদিকে অপ্রকাশিত রয়েছে রূপসুন্দরী, শুক্লামলে, স্বপ্ন এবং নচিকেতা কাব্যের পান্ডুলিপিও। কবি শশাঙ্কমোহন সেনের বঙ্গবাণী (১৯১৫) বাংলা তুলনামুলক সমালোচনা সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ। তাঁর উল্লেখযোগ্য আরেকটি সমালোচনা গ্রন্থ হলো মধুসুদন-অন্তর্জীবন ও প্রতিভা (১৯২৮)। সাহিত্য বিচারের মান ও পদ্ধতি বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষাপটে হওয়াই, যে বাঞ্ছনীয় তা তিনি তাঁর সমগ্র সমালোচনা সাহিত্যে প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদনের প্রধান কাব্য বিশ্লেষক সম্ভবত তিনিই। আধুনিক বাংলা ছন্দ আলোচনারও সূত্রপাত শশাঙ্কমোহনের হাতে। তাঁর ছন্দ বিষয়ে আধুনিক চিন্তার এমন সব মৌলিক কথা বলেছেন যার প্রভাব পরবর্তী ছন্দ-চিন্তকদের ওপর সুষ্পষ্ট হয়। অমিত্রাক্ষর ছন্দের মর্মবাণীর মূল বৈশিষ্ট্য উদঘাটনে শশাঙ্কমোহন সেন যে অন্তদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন তা অসাধারণ। তিনি অনুভব করেছিলেন, মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দের বিরামযতির শক্তি মিলটনের মত। মিলটনী-ছন্দের অনুপম ধ্বনি-শক্তিই মধুসূদন বাংলা ছন্দে নিয়ে এসেছেন। কবি প্রতিষ্ঠা ও সাহিত্যিক খ্যাতি চট্টগ্রামে বসবাসকালীন কর্মজীবনেরই অর্জন। চট্টল ধর্মমন্ডলী তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁকে কবিভাস্কর উপাধি প্রদান করে। কবি শশাঙ্কমোহন সেন লেখাপড়া ও সাহিত্যে শুধু কৃতিত্ব প্রদর্শন করেননি, বক্তৃতায়ও তাঁর অসাধারণ কৃতিত্ব ছিল। তেমনি ছিলেন সুপুরুষও বটে। অন্যদিকে এই কৃতি সাহিত্যিক মাইকেল মধুসূদন দত্তের বেশ-ভূষা অনুসরণ করতেন বলে জানা যায়। তাঁর প্রকাশিত স্বর্গে ও মর্ত্যে (১৯২২),বিমানিকা(১৯২৪),মিলন গাঁথা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ কবি-প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। বাংলা ভাষায় সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রে প্রথম সার্থক ঐতিহাসিক সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক কবি ভাস্কর শশাঙ্কমোহন সেন ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পরলোকগমণ করেন। বাংলা একাডেমি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ভূঁইয়া ইকবাল রচিত শশাঙ্কমোহন সেন জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করে। জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় শচীন্দ্রনাথ গুহের সম্পাদনায় কবিভাস্কর শশাঙ্কমোহন সেন স্মারকগ্রন্থ।


Keep updated with us via www.facebook.com/VoiceofPatiyaFans

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

😀 আমাদের পোর্টালে মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি, আপনারা তার যথাযথ অনুসরণ করে আপনাদের মন্তব্য প্রদান করবেন।

• ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না। কিছু বিষয় ব্যতিক্রমী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য করলে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, আক্রমণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় এরকম কোন মন্তব্য করা যাবে না।

পরামর্শের জন্য মেইল contact@voiceofpatiya.com