"পদ্মা সেতু" ক্যাটাগরীর সকল আর্টিকেল
পদ্মা সেতু লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পদ্মাপাড়ে সাজসাজ রব, উদ্বোধনের অপেক্ষায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু; পদ্মা সেতু; পদ্মা; জাজিরা; মাওয়া; নদী; Padma; Padma Bridge; Jazeera; Mawa; China Major Bridge
পদ্মাপাড়ে সাজসাজ রব, উদ্বোধনের অপেক্ষায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু

ভয়েস অব পটিয়া-ন্যাশনাল ডেস্কঃ সকল জল্পনা-কল্পনা, নানামুখী চ্যালেঞ্জ, বাঁধা-বিপত্তির অবসান ঘটিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে দৃশ্যমান যান চলাচলের উপযোগী স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আলোকিত। উদ্বোধনের বাকি আর মাত্র কিছু ঘন্টা। রাত পোহালেই উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। ঘটবে পদ্মা পাড়ি দিতে যুগ-যুগান্তের ভোগান্তির অবসান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য উন্মুক্ত হবে এক নতুন দ্বার।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উচ্ছ্বাসে মুখোরিত পদ্মা সেতু নির্মাণের অন্যতম সাক্ষী মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এলাকায় আনন্দে উদ্ভাসিত পদ্মাপাড়ের মানুষ। সর্বত্র সাজসাজ রব। 

সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন ও সুধী সমাবেশ হবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পদ্মা পাড়ে। প্রস্তুত ফলক মঞ্চ। অনুষ্ঠানস্থল, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সাজসজ্জায় ভরে উঠেছে।  সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনে। সমাবেশস্থলের জন্য দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরি, সেতুর নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপনের কাজসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষের পথে। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে পুরোদমে। 

মাওয়া প্রান্তে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেতু পেরিয়ে তিনি আসবেন জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায়। সেখানে কয়েকটি স্থাপনার উদ্বোধন করে শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে গিয়ে জনসভায় ভাষণ দেবেন। এ লক্ষ্যে জনসভাকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএফের নির্দেশে সকাল থেকেই সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প নৌরুট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে প্রায় দশ লক্ষাধিক জনসমাগমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরো মাওয়া এলাকায় জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ। বিভিন্ন পেট্রোলিং ছাড়াও আকাশপথে থাকবে র‍্যাবের হেলিকপ্টারের নজরদারি। 

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ০৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বরে এর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করেছেন। এর মধ্যে চীনের ৭০০ এবং বাংলাদেশের প্রায় ৪ হাজার মানুষ কাজ করেছেন। ১৬০টির মতো স্থানীয় সহযোগী ঠিকাদার হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ মিটার। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। 
অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লিমিটেড। 

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি জটিলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শেষ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় সাড়ে সাত বছর লেগেছে।