vop-ad1

ভয়েস অব পটিয়াঃ পটিয়ায় পুলিশের হাত থেকে আসামি ছাড়িয়ে নিতে ক্ষমতাসীন দলের মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক।

পটিয়ায় পুলিশের হাত থেকে আসামি ছাড়িয়ে নিতে ক্ষমতাসীন দলের মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ আইজিপির; পটিয়া; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক


ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্ক: পটিয়ায় পুলিশের হাত থেকে আসামি ছাড়িয়ে নিতে ক্ষমতাসীন দলের মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।

রোববার বিকেলে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের শ্যূটিং ক্লাবে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ ও রেঞ্জ পুলিশ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 
আইজিপি বলেন, ‘পটিয়াতে এজাহারভুক্ত একটি মামলায় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে আটক করায় ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যারিকেড দেয়া হলো। তাদের অনেক বুঝানো হলো তারা কোনো কথাই শুনলো না। আমি পুলিশ কমিশনারকে বললাম- তারা না শুনলে অ্যাকশনে যেতে হবে। তাদেরকে ধরতে হবে। মামলা দিতে হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তারা যদি বলতো ঠিক আছে ধরেছেন, এখন যাতে জামিন হয় তা একটু দেখবেন। তখন জামিন হওয়ার বিষয়টা আমরা দেখতাম। কিন্তু তারা প্রশাসনকে জিম্মি করে থানা থেকে নিয়ে যাবে। তাহলে আইনের শাসন কোথায়? সড়ক অবরোধ করে এই যে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দেয়া হলো। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের ভোট বেড়েছে, কি কমেছে বলুন? আমার মনে হচ্ছে ভোট কমছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের কারণে ভোট কমবে সেখানে পুলিশের নমনীয় ভাব দেখানো উচিৎ নয়। পুলিশ কমিশনারকে আমি তিরস্কৃত করেছি। পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, আপনি দুর্বল কেন? আপনি তো ঘুষ খান না। আমার কাছে রিপোর্ট আছে। সরকারী চেয়ার ধরে চাকরি করেন কেন? অসুবিধা কি, আমি জীবনেও তো চেয়ার ধরে চাকরি করিনি। আইনের শাসন তো তখনই হবে যখন ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এসব বুঝবেন। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ব্যারিকেড দিয়ে আসামি ছাড়ানোর বিষয়টা তো লজ্জার বিষয়। ৫-১০ দিন জেল খাটলে অসুবিধা কি? তাছাড়া পলিটিশিয়ানরা জেল না খাটলে তো নেতা হবে না। নেতা তো হতেই হবে। পুলিশই তো নেতা বানায়। অনেক নেতা পুলিশ বানিয়েছে।’

আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ৯২ দিনের অবরোধে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহন সেক্টর ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করা কোনো রাজনীতি কি না সেটা বিচার করার ভার আপনাদের উপর। পরীক্ষার দিন হরতাল অবরোধ না দিলে কি এমন ক্ষতি হতো? কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা তারা চিন্তাও করেনি। গত বছরের তুলনায় ৮২ হাজার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে এবার। দেশের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে পড়াশোনায় তাদের মনোযোগ ছিল না। আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে তারা পরীক্ষা দিয়েছে। যার কারণে ফল খারাপ হয়েছে।’

পরিবহন নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অবরোধের সময় অনেক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদেরকে কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। যেভাবে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুরোটা দেয়া সম্ভব না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে এসেছেন। পরিবহন সেক্টরে আমি কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছি। টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে। পরিবহন সেক্টরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। চালকদের জন্য আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’

মানবপাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। সমুদ্র পথে যাতায়াত কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা যদি বুঝানো যায়, আর যারা এসব কাজে জড়িত দালাল চক্র তাদেরকে ধরা গেলে কক্সবাজারবাসী অপবাদ থেকে মুক্তি পাবে, প্রশাসন স্বস্তি পাবে। এ লক্ষ্যে আমরা অনেক কাজ করেছি। আপাতত মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে। এটা ধরে রাখতে হবে।’ মাদক ব্যবসা সম্পর্কে আইজিপি বলেন, ‘এই ধরনের কথা শুনা যায় যে, মাদক ধরিয়ে দিলে সোর্সকে অনেক টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে যা মাল ধরা পড়ে তার অর্ধেক দিতে হয়। না দিলে সে ধরিয়ে দেয় না। এমন কথা আছে যে, ধরা পড়া ইয়াবার মধ্যে অর্ধেক তারা নিয়ে যায়। ১০ কেজি সোনা ধরা পড়লে ২ কেজি সে নিতে পারে। কিন্তু মাদকের ব্যাপারে তো প্রশ্নই উঠে না। কোনোমতেই এটা অ্যালাউ করা যাবে না। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সোর্সকে বলতে হবে, দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে কাজ করতে।’ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোটা অংকের সোর্স মানি দেবেন না। সোর্সকে মাদকের অর্ধেক দিয়ে দিলে সে তো এসব আবার বিক্রি করবে। তার মানে সে লাইসেন্স নিয়ে বিক্রি করছে এমন হয়ে গেল।’

স্বাধীনতা বিরোধী চক্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘লাগাতার অবরোধের ৯২ দিন সাতকানিয়ায় বড় ধরনের নাশকতা কেন হয়নি সেটা গবেষণার বিষয়। হয়তো সাঈদীর রায়ের পর চাঁদে দেখা গেছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় ওই এলাকার মানুষ পরে সতর্ক হয়েছে। এছাড়া বহু মামলা হয়েছে। বাড়ি ঘরে তারা থাকতে পারছে না। এসব কারণে তারা মনে করছে, এসব নাশকতা করে লাভ নেই। এ কারণে হয়তো নাশকতা কমে এসেছে। আমি মনে করি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তাদেরকে বিশেষ নজরদারীতে রাখতে হবে। তারা কি করে সেটা দেখতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।’

‘রমজান মাসে ফরমালিন ও রাস্তাঘাটে যানজটের বিষয়ে প্রশাসনকে দেখতে হবে। বিদেশে বিভিন্ন উপলক্ষগুলোতে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। আর আমাদের দেশে রমজান এলে দাম বাড়িয়ে দেয়। ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, রমজানে যাতে অকারণে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে। ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যাপক অভিযান করবো।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ চলছে। গাড়ির সমস্যা আছে। অনেক সময় টাকা পেলেও ছাড় হয় না। ৯২টি গাড়ি আমরা পাচ্ছি। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের প্রতি আমার বিশেষ নজর থাকবে। বোয়ালখালী থানার জন্য একটি গাড়ি আমি অন্য কোনো জায়গা থেকে হলেও ব্যবস্থা করে দেবো। সর্বোপরি পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সুসস্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। এতে অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।’

নগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম তালুকদার, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন, স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান প্রমুখ।
Share To:

Voice of Patiya

জানাতে পারেন আপনার মন্তব্য :

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

• আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন। ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না। কিছু বিষয় বিস্তৃত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য পোস্ট করছে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।