ভয়েস অব পটিয়াঃ করোনা আতঙ্কে সাধারণ রোগের চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামে গত কয়েকদিনে মারা গেছেন আড়াইশোর বেশি মানুষ।
![]() |
| করোনা আতঙ্ক : চট্টগ্রামে মিলছে না সাধারণ রোগের চিকিৎসাও |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ করোনা আতঙ্কের প্রভাবে সাধারণ বা ক্রনিক রোগ কোনটাইর ন্যূনতম কোন চিকিৎসাই মিলছেনা চট্টগ্রামের বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে। সরকারী যেসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেখানে রয়েছে অক্সিজেন-আইসিইউসহ চিকিৎসা সরঞ্জামেরও চরম সংকট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সাথে ভুল ওষুধ-এন্টিবায়োটিক সেবন এবং আতঙ্কও অন্যতম কারণ। ফলে করোনার চেয়ে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে মৃত্যু হচ্ছে চার-পাঁচগুণ বেশি। গত কয়েকদিনে এ সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াইশো পর্যন্ত। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিলেন সংশ্লিষ্টরা।
আবদুল মান্নান, চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ব্যবসায়ী; বুকে ব্যথার জন্য চারটি হাসপাতাল ঘুরেও পাননি চিকিৎসা। জ্বর-সর্দি-কাশি থাকায় করোনার উপসর্গ বলে চিকিৎসা দেয়নি কোন হাসপাতাল। চিকিৎসা না পেয়ে বাসায় মারা যান তিনি। শুধু তিনিই নন; জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন কেউ না কেউ।
স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়ার মতে, সাধারণ ফ্লু'র সময়ে একদিকে করোনা সন্দেহে যেমন চিকিৎসা পাচ্ছে না মানুষ, তেমনি আছে আতঙ্ক। এর সাথে আছে ভুল ওষুধ-এন্টিবায়োটিক সেবন কিংবা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভরে করোনার বিষয় গোপন করা। যার ফলে সামান্য জ্বর-শ্বাসকষ্টেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
চট্টগ্রামে গত কয়েকদিনে শুধু উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আড়াইশোর বেশি মানুষ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হার করোনার চেয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি।
বাড়ছে হাসপাতালের সংখ্যা, শোনা যাচ্ছে নানা উদ্যোগেরও কথা। কিন্তু কোনভাবেই কাটছেনা চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের লেজেগোবরে অবস্থা।
করোনা সংকটের শুরুর দিকে চট্টগ্রামে কোভিড চিকিৎসার দায়িত্ব দেয়া হয় ১২টি বেসরকারী হাসপাতালকে। কিন্তু তারা নিজেদের দায় এড়াতে বেছে নেয় ৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে। নানা নাটকীয়তার পর যেটি চালু হয় সপ্তাহখানেক আগে। ১১০টি সাধারণ আর আইসিইউ শয্যা নিয়ে চালুর কথা ছিল হাসপাতালটি। তবে ওই হাসপাতাল চালু করা গেলেও বাস্তবে সেবা মিলছে দশ ভাগের এক ভাগ। চলছে দায়সারাভাবে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে বক্তব্য পাওয়া যায়নি দায়িত্বশীল কারও।
চট্টগ্রামে আরও দুটি বেসরকারী হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করে সরকার। যার একটি বন্দরনগরীর সবচেয়ে আধুনিক সুবিধার ইমপেরিয়াল হাসপাতাল। যেখানে প্রস্তুত করা হচ্ছে ৩০টি আইসিইউ শয্যা। তবে প্রস্তুতি নিয়ে বাস্তবতার সাথে মেলেনি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। ইউএসটিসি বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে সাধারণ আর আইসিইউ মিলে ১০৩টি শয্যা বুধবার থেকে চালুর কথা বলা হলেও কাজ শেষ করা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার একের পর এক অভিযোগ উঠছে, তখন চট্টগ্রাম জেলার ২০টি বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে মোট ৮২৫ শয্যা খালি, যা এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ধারণক্ষমতার প্রায় অর্ধেক।
তবে, বেসরকারী হাসপাতালে সব রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে মনিটরিং শুরু হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
করোনায় এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা দিতে অনাগ্রহী বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে সার্ভেইল্যান্স টিম।
কোন হাসপাতালে কত শয্যা খালি
এর আগে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক মনিটর করতে গঠিত সার্ভেইল্যান্স দল ৩ জুন হাসপাতালগুলোর তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়। সার্ভেইল্যান্স টিমের কাছে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দেখা যাচ্ছে, নগরী ও জেলার ২০টি হাসপাতালে মোট ১৫৮৮টি শয্যার মধ্যে ৮২৫টি খালি ছিল মঙ্গলবার। এর মধ্যে চন্দনাইশ উপজেলায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০০ শয্যার মধ্যে ২৮৫টিই খালি ছিল। সেখানে একটি ১০০ শয্যার কোভিড-১৯ স্থাপনের কাজ চলছে। নগরীর মধ্যে পূর্ব নাসিরাবাদ চন্দ্রনগর মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫০ শয্যার মধ্যে ২১৩টিই খালি আছে। বহদ্দারহাটের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫০ শয্যার মধ্যে ১১৯টি খালি। ওআর নিজাম রোডের মেডিকেল সেন্টারে ১২৪ শয্যার মধ্যে ৬১টি শয্যাই খালি। সিএসসিআর এ ৮০ শয্যার মধ্যে ৩৯টি খালি। পাশাপাশি ইম্পেরিয়াল ও শেভরন হাসপাতালে ৩০টি, সার্জিস্কোপে ১৫ এবং রয়েল হাসপাতালে ১৩টি শয্যা খালি। এছাড়া এশিয়ান হাসপাতালে ৮টি, পার্কভিউ ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬টি করে বেড খালি আছে বলে জানা গেছে। ২৩০ শয্যার চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার একটি শয্যাও খালি নেই। এখানকার কোভিড-১৯ ইউনিটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১১ জন এবং কোভিড-১৯ সাসপেক্ট ৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন। ম্যাক্স হাসপাতালের ৮০টি শয্যার সবগুলোতেই রোগী আছেন। মেট্রোপলিটন ও ডেল্টা হাসপাতালে ৭০টি করে শয্যার একটিও ফাঁকা নেই। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই হাসপাতাল দুটিতেও সেবা বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ। তাই সব বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে সেবায় বাধ্য করার ওপরই জোর দিলেন তারা।
শুধু হাসপাতাল চালু করলেই হবে না, সঠিক ব্যবস্থাপনা বা সমন্বয় না থাকলে মানুষ কোন সুফলই পাবেনা বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্যখাতের বিশ্লেষকদের মতে, স্বাস্থ্যবিভাগে ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় আর শৃঙ্খলা ফেরানো না গেলে কোন উদ্যোগেই স্বস্তি আসবেনা।



জানাতে পারেন আপনার মন্তব্য :
0 comments so far,add yours
~ মন্তব্য নীতিমালা ~
😀 আমাদের পোর্টালে মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি, আপনারা তার যথাযথ অনুসরণ করে আপনাদের মন্তব্য প্রদান করবেন।
• ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।
• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।
• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না। কিছু বিষয় ব্যতিক্রমী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।
• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য করা যাবে না।
• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য করলে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।
• ঘৃণাত্মক, আক্রমণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় এরকম কোন মন্তব্য করা যাবে না।
পরামর্শের জন্য মেইল contact@voiceofpatiya.com