vop-ad1

ভয়েস অব পটিয়াঃ টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি সিলেট বিভাগসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো, পানি বন্দী মানুষের বাঁচার আকুতি; সিলেট; সুনামগঞ্জ; বাংলাদেশ; বন্যা; ভারত; আসাম; মেঘালয়; চেরাপুঞ্জি; Sylhet; Sunamganj; Bangladesh; India; Assam; Meghalaya; Cherrapunji; Flood
ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো, পানি বন্দী মানুষের বাঁচার আকুতি

ভয়েস অব পটিয়া-ন্যাশনাল ডেস্কঃ টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। হঠাৎ শুরু পাহাড়ী ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে এই বিভাগের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা। পানির তোড় বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে সিলেটসহ এর আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন। 

বন্যা পরিস্থিতি অবনতির মধ্যেই সিলেটে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা বন্যা পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম জানান, আগামী ২২ জুন পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল অতি ভারী বর্ষণের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। 

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছরের মধ্যে তারা এতো ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হননি।

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো, পানি বন্দী মানুষের বাঁচার আকুতি; সিলেট; সুনামগঞ্জ; বাংলাদেশ; বন্যা; ভারত; আসাম; মেঘালয়; চেরাপুঞ্জি; Sylhet; Sunamganj; Bangladesh; India; Assam; Meghalaya; Cherrapunji; Flood
সিলেট বন্যা: পানিবন্দী মানুষ

সবমিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট-নেত্রকোনার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রেল যোগাযোগ। এর পাশাপাশি রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ দেশের আরও অন্তত ৩৩টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

 
ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো, পানি বন্দী মানুষের বাঁচার আকুতি; সিলেট; সুনামগঞ্জ; বাংলাদেশ; বন্যা; ভারত; আসাম; মেঘালয়; চেরাপুঞ্জি; Sylhet; Sunamganj; Bangladesh; India; Assam; Meghalaya; Cherrapunji; Flood
সিলেট বন্যা: নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বানভাসী মানুষজন

গত রাত থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, সেই সাথে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে সেনাবাহিনীর সহযোগীতা চাওয়া হয়। এতে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। নগর এলাকারও প্রায় অধিকাংশ স্থান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সেসব স্থানে বিভিন্নভাবে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন তারা। 

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো, পানি বন্দী মানুষের বাঁচার আকুতি; সিলেট; সুনামগঞ্জ; বাংলাদেশ; বন্যা; ভারত; আসাম; মেঘালয়; চেরাপুঞ্জি; Sylhet; Sunamganj; Bangladesh; India; Assam; Meghalaya; Cherrapunji; Flood
সিলেট বন্যা: সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল

আজ শনিবার সিলেট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এর আগে শুক্রবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। 
তিনি জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩৫ জন ডুবুরির একটি দল উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে, আরো ৬০ জন সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। নৌবাহিনীর একটি দল জালালাবাদে এবং আরেকটি কোম্পানীগঞ্জে কাজ করছে বলে জানান তিনি। 

এদিকে বন্যাদূর্গত এলাকায় পানিবন্দী মানুষকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষসহ বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর পাশাপাশি ১১টি জেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে এক কোটি ৭২০ মেট্রিক টন চাল, দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা নগদ সহায়তা ও ৫৮ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ত্রাণ কর্মসূচি-১ অধিশাখার উপ-সচিব লুৎফুন নাহার। 

এদিকে বিদ্যুৎ উপগ্রিডে বন্যার পানি ঢুকায় বন্যাদুর্গত সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও। 

এই পরিস্থিতিতে দুর্যোগকালীন জরুরী টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপনে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড (বিএসসিএল)-এর চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ শনিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুর্যোগকালীন জরুরী টেলিযোগাযোগ সেবায় এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সেবা দিতে যাচ্ছে, যা এই স্যাটেলাইটের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ১২ সেট ভিস্যাট যন্ত্রপাতি দিয়েছে বিএসসিএল, যার মাধ্যমে জরুরী টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও বিএসসিএল সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরকেও আরো ২৩ সেট ভিস্যাট যন্ত্রপাতি দেওয়ার কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে আরো ২৩টি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরী টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা হবে।

ইতিমধ্যে টেলিকম অপারেটরগুলো তিনটি করে টোল ফ্রি নাম্বার চালু করেছে বানভাসী মানুষদের জন্য।

গ্রামীণফোন- 01769177266, 01769177267, 01769177268 
রবি- 01852788000, 01852798800, 01852804477
বাংলালিংক- 01987781144, 01993781144, 01995781144 
টেলিটক- 01513918096, 01513918097, 01513918098 

বন্যার কারণ 

নাব্যতা নষ্ট 

নদী গবেষকরা বলছেন, এবারের আকস্মিক বন্যার পেছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ হলেও নদীর নাব্যতা নষ্ট একটি বিরাট কারণ, যা নষ্টের জন্য ভারত অংশে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনকে দায়ী করছেন গবেষকরা।

ভারতের উজানে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটি আলগা হয়ে নদীতে চলে আসে। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে সেখানে নাব্যতা সংকট তৈরি হচ্ছে। সেই সাথে বৃক্ষ নিধন তো চলছেই। 

এর পাশাপাশি নদীগুলো ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়া, ময়লা-আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে জলাভূমি ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন গবেষকরা। এই কারণে মেঘালয় বা আসামে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই সিলেট বা কুড়িগ্রাম এলাকায় বন্যার তৈরি হচ্ছে বলে গবেষকরা মনে করছেন। 

অপরিকল্পিত উন্নয়ন 

জলবায়ু গবেষক অধ্যাপক ইসলাম বলছেন, এবারের হঠাৎ বন্যার পেছনে মানুষের নিজেদের তৈরি কতগুলো কারণ রয়েছে। সিলেট বা সুনামগঞ্জ এলাকায় আগে ভূমি যেরকম ছিল, নদীতে নাব্যতা ছিল, এতো রাস্তাঘাট ছিল না বা স্থাপনা তৈরি হয়নি। ফলে বন্যার পানি এখন নেমে যেতেও সময় লাগে। আগে হয়তো জলাভূমি, ডোবা থাকায় অনেক স্থানে বন্যার পানি থেকে যেতে পারতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এছাড়া হাওরে বিভিন্ন জায়গায় পকেট পকেট আমরা রোড করে ফেলেছি। ফলে পানি প্রবাহে বাধার তৈরি হচ্ছে। শহর এলাকায় বাড়িঘর তৈরির ফলে পানি আর গ্রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। যার ফলে বন্যার তীব্রতা আমরা বেশি অনুভব করছি। এসব কারণে আগাম বন্যা হচ্ছে এবং অনেক তীব্র বন্যা হচ্ছে। 

বাঁধ না থাকা 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ বা নেত্রকোনা হাওর এলাকায় বেশিরভাগ জনপদে কংক্রিটের তৈরি শহর রক্ষা বাঁধ নেই। ফলে কোন কারণে হাওরে বা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করলে তার খুব দ্রুত শহরে বা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। 

বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, হাওরে এসব এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়নি। সেটা করা না হলে বাড়িঘর উঁচু করে তৈরি করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। সেটাও করা হয়নি। ফলে যখন এভাবে আকস্মিক বন্যা দেখা দিচ্ছে, সেটার ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হচ্ছে।
Share To:

Voice of Patiya

জানাতে পারেন আপনার মন্তব্য :

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

• আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন। ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না। কিছু বিষয় বিস্তৃত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য পোস্ট করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য পোস্ট করছে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।