|
পটিয়া বাইপাস সড়কে দুর্ঘটনারোধে গতিরোধক চান স্থানীয়রা |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সড়কটি মহাসড়কের একাধিক অংশের সাথে যুক্ত থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পটিয়া পৌর সদরের ইন্দ্রপুল থেকে কচুয়াই ইউনিয়নের গিরিশ চৌধুরী বাজার পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নবনির্মিত ওই সড়কের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, শীঘ্রই সড়কটি উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। তবে সড়কটি মহাসড়কের একাধিক অংশের সাথে যুক্ত থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে। তাই স্থানীয়রা সড়কের ওই সব স্থানে গতিরোধক স্থাপন এবং ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
পটিয়া পৌর সদরের উপর দিয়ে বয়ে চলা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অংশে দীর্ঘদিন ধরে যানজট লেগেই আছে। এতে বাসযাত্রী বিশেষ করে পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারগামী পর্যটকদের অনেক সময়ের অপচয় হয়।
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা পটিয়া-চন্দনাইশ-সাতকানিয়া-লোহাগাড়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়েতে যুক্ত হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লাইনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যার ফলে মহাসড়কের পটিয়া পৌরসদরের অংশে ব্যাপক যানজট লেগেই থাকে। এদিকে এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য পটিয়া পৌরসদরের ইন্দ্রপুল হতে পটিয়া পৌরদরের ইন্দ্রপুল হতে উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের গিরিশ চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
২০১৬ সালের ১ জুন সওজ চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তরে পটিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঢাকা র্যাব আরসি অ্যান্ড রিলেয়াবেল বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক নির্মাণের সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ সড়কের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্প অনুযায়ী পটিয়া পৌরসভার ইন্দ্রপোল থেকে ভাটিখাইন-কচুয়াই ইউনিয়ন হয়ে গিরিশ চৌধুরীর বাজার এলাকায় মহাসড়কের সঙ্গে মেলবন্ধন রচনায় সড়কটির দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৫ কিলোমিটার। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬২ কোটি টাকা। বাইপাস সড়ক প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ৭৮ লাখ চার হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮.৬১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া বাইপাস ছাড়া দোহাজারী সাঙ্গু সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও ৪৯টি বিপজ্জনক বাঁক সোজাকরণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বাবদ আরো ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। পরে নিয়োজিত ঠিকাদার অদৃশ্য কারণে চার বছরেও কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটি বাতিল হওয়ায় পটিয়া বাইপাস নির্মাণ প্রকল্পটিও থমকে দাঁড়ায়। পরে এ প্রকল্প হতে ৬২ কোটি টাকার বরাদ্দে শুধু পটিয়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ পটিয়া মনসার টেক থেকে দোহাজারী সাঙ্গু ব্রিজ পর্যন্ত ৯৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। ওই বছর ২৫ জুন ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেড (আইটিসিএল) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের মধ্যে পটিয়া শহর এলাকাকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পটিয়া ইন্দ্রপোল থেকে গিরিশ চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ৫.০২ কিলোমিটার পটিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে সড়কটি চালু হলে পৌর সদরের পাইকপাড়া, ভাটিখাইন এবং কচুয়াই ফারুকীপাড়া এলাকায় দ্রুতগতির দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলাচল শুরু করায় মানুষ খুশি হলেও বাইপাস সড়কটির সংযোগস্থলে কোন ধরনের গতিরোধক-দিকনির্দেশক না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ফারুকীপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘এ এলাকা বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচলের ফলে যানবাহনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। যা দূর করতে ৩-৪টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ এবং গতিরোধক স্থাপন করা জরুরী।’
চট্টগ্রাম-দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘পটিয়া বাইপাস সড়কের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সড়কের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার কার্পেটিং কাজ করা হয়েছে। বাকি তিন কিলোমিটারের মেকার্ডাম কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করি আগামী জুন মাসের নির্দিষ্ট কাজের মেয়াদের পূর্বেই অবশিষ্ট ১০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে। এতে এখানকার দীর্ঘদিনের যানজট যেমন নিরসন হবে, তেমনি পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও পাহাড়ীকন্যা বান্দরবানের পর্যটক এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রী সাধারণের সময় এবং যাতায়াতের দূরত্বও কমে আসবে।’