Search Result For "শতবর্ষের ইতিহাসঃ"
শতবর্ষের ইতিহাসঃ ক্যোয়ারীর জন্য তারিখ অনুসারে বাছাই করা পোস্ট দেখানো হচ্ছে৷ প্রসঙ্গ অনুসারে বাছাই করুন সব পোস্ট দেখান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়; ‍asrahs; patiya; chittagong; chattogram; abdus sobhan; school; historical; পটিয়া; চট্টগ্রাম; মাওলানা আবদুস সোবহান; বিদ্যালয়; স্কুল; পটিয়ার স্কুল; চট্টগ্রামের স্কুল; ঐতিহ্যবাহী; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ৫ম (শেষ) পর্ব

শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব 

৫ম (শেষ) পর্ব

১৯. পটিয়াতে বালক বিদ্যালয় সরকারীকরণ বিষয় না জানলে কি করে হয়? 
১৯৭৯ সাল থেকে সমস্ত প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়ম মেনে দুটি স্কুল একীভূত করে এক নামে সরকারীকরণ করার জন্যে সরকারীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। ১৯৮২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী তারিখে তৎকালীন পটিয়া মহকুমা প্রশাসক নাজমুল আলম ছিদ্দিকী সাহেবের সভাপতিত্বে, তাঁরই সরকারী অফিসে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ডিজি জনাব ড. হাফেজ আহমদ, ডিডি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মিসেস আর.জে.আর ছালেহা খানম, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক জনাব মাহাবুবুল আলম, যাঁরা সকলেই প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী পদধারী ছিলেন।পটিয়ার বিখ্যাত এ দুটি স্কুল একসাথে “পটিয়া ইউনাইটেড আদর্শ আবদুস সোবহান রাহাত আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়” নামকরণ চুড়ান্ত করা হয়েছিলো এবং তা অনুমোদিত হয়েছিলো। ঐ দিন দুটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ, প্রধান শিক্ষকগণসহ অন্যান্য শিক্ষকগণও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কি যেন জটিলতার কারণে প্রজাতান্ত্রিক ঐ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিলো। 

অতঃপর উভয় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ ১৯৯২ ইংরেজীতে শিক্ষা সচিব বরাবরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পূনঃ আবেদন পেশ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর ১৯৯২ ইংরেজী তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষা সচিব জনাব সফিউল আলম সাহেবের সভাপতিত্বে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ যোবাদুল হক, উপসচিব (মাধ্যমিক) জনাব মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জনাব মুহাম্মদ আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব ডা. সৈয়দ আহমদ প্রমুখ কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পটিয়া থেকে ঐ সভাতে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব হামিদুল হক, প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ মুসা এবং পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব আমীন খাঁন উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ০২ মে ১৯৯৩ ইং তারিখে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশমূলক চিঠি প্রেরণ করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য (ঐ সময়ে চট্টগ্রামের স্কুলগুলিও কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ছিলো)। বিএনপি সরকার আমলে আবারো ঐ সিদ্ধান্ত আটকে থাকলো। 

বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০১৫ সালে পূনঃ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে প্রত্যেক উপজেলা সদরের একটি বালক স্কুল সরকারীকরণ করা হবে। পটিয়ার সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে পটিয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে পটিয়ার সকল রাজনৈতিক দলসমূহের মূল নেতৃবর্গ, বুদ্ধিজীবিগণ, সাংবাদিকগণ, শিক্ষকগণ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাগণকে জড়ো করে ২৫ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে পটিয়া ক্লাব হলে ১টি, ২৮ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে ১টি এবং ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইং পটিয়া পৌরসভা হলরুমে ১টি সভার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। শেষ ২টি সভাতে এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব, মেয়র সাহেব, ইউএনও মহোদয়া (শেষ সভাতে), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণসহ সকল পর্যায়ের ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। শেষ সভাটি মেয়র মহোদয়ের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ছিলো পটিয়ার ২টি বিখ্যাত স্কুল একীভূত করে সরকারীকরণের ১৯৮২ সালের সরকারী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং ১৯৯৩ সালের সর্বশেষ আত্মীকরণের নির্দেশ পটিয়ার মাননীয় এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে কার্যকর করা। এটা সম্ভব ছিলো, সুযোগও ছিলো কিন্তু পারা গেলো না। কিন্তু কেনো পারা গেলো না, ইতিহাস ঠিক সময়ে তাও বলে দেবে। আজকের বাস্তবতায় আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বছরের সফলতা ও ইতিহাসের সাক্ষ্য ও তথ্য নিয়ে, এই বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণ করবার সকল ধরণের আয়োজন, উপকরণ ও উপযোগিতা কানায় কানায় পূর্ণ আছে। প্রয়োজন শুধু বাস্তবায়নের উদযোগ আর প্রচেষ্টা। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা, শিক্ষকসংখ্যা ও কর্মচারীসংখ্যা ঠিক রেখে প্রয়োজনে পরবর্তীতে ডাবল শিফটের ব্যবস্থা রেখে যদি সরকারীকরণের ব্যবস্থা নেয়া যায়, তাহলে প্রতিবছর শত শত ছেলে পটিয়াতে সরকারী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। পটিয়াতে বালক বিদ্যালয় সরকারীকরণের দাবী ও প্রত্যাশা আজ কোন ব্যক্তির বা শুধু পটিয়াবাসীর নয়, বরং ইতিহাসের ও সত্যের। 

২০. স্কুল প্রতিষ্ঠার শত বছরের ইতিহাস স্মরণের অনুষ্ঠান। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ শুক্রবার বিদ্যালয়ের শত বছর পূর্তির উৎসব ও মহামিলন মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রগণ বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে তাঁদের সপরিবার সদস্যগণসহ বিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। শত বছর পূর্তির এই উৎসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছিল আলহাজ্ব মোহাম্মদ ছোলায়মান চেয়ারম্যান, ড. রফিকুল আলম সদস্য সচিব, পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ-কে প্রধান সমন্বয়কারী এবং বিদ্যালয়ের অপরাপর প্রাক্তন ছাত্রগণকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে গঠিত উদযাপন পরিষদে উদ্যোগে। বাস্তবতা ছিল এই যে, সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ ‘আদা জল খেয়ে’ না নামলে, আলহাজ্ব ছোলায়মান সাহেবের নিয়মিত তাগাদা না থাকলে এবং বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল ঐ সময়ে মাননীয় মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সাহেবকে আনার দায়িত্ব না নিলে এ আয়োজন অসম্ভব হতো। তবে শতবর্ষ উদযাপনের সার্বিক আয়োজন সফল করতে বেশ কয়েকজনের ভূমিকা বিশেষ করে কবিয়াল আবু ইউসুপ, এস.এম.এ.কে জাহাঙ্গীর, এ.টি.এম নাছির উদ্দিন, আবুল কালাম বাবুল, আইয়ুব বাবুল, ফৌজুল করিম, গোফরান রানা, আলী হেসেন, মোর্শেদ নিজামী, ডা. ওয়াহিদ হাসান, ডা. সাখাওয়াৎ হিরু, ডা. আইয়ুব নবী, এডভোকেট মাহউদ্দিন, সাহাবুদ্দিন সাবু, আবুল কাশেম, শহীদুল্লাহ সাদা, মোঃ লিয়াকত, সাঈদ খোকন, মোঃ রিয়াজ সহ আরো কতেকের প্রতিদিনকার কর্ম তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল। ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৮ মার্চ অনুষ্ঠানের দিন রাত বারোটা পর্যন্ত আমি কোনো পদে না থেকেও প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অফিস ডিউটি করার কাজটি দ্বিধাহীনভাবে করার চেষ্টা করেছি। তবে, কোনো ধরনের আর্থিক দায়িত্ব পালন কিংবা অর্থ গ্রহণে আমার ভূমিকা নেই। বরং স্মারকগ্রন্থের বেশীরভাগ লেখাগুলোর কয়েকবার করে প্রিন্ট নেয়ার ব্যয় বহন আমার নিজ থেকে করতে হয়েছে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানের দিন সবচেয়ে বড়ো স্মৃতিময় ডক্যুমেন্ট বা ‘স্যুভেনির’ হওয়ার কথা ছিলো, “স্মারকগ্রন্থটি”। এজন্যে, জনাব প্রফেসর আবদুল আলীম সাহেবকে আহ্বায়ক ও আলহাজ্ব আবদুর রহমান স্যার, বি.কম মুছা স্যার, স.ম ইউনুচ, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, এস.কে.এম জাহাঙ্গীর, শহীদুল্লাহ সাদা গণকে সদস্য করে স্মারকগ্রন্থের লেখা সম্পাদনা ও বাছাই করার জন্য একটি পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো। উক্ত লেখা বাছাই ও সম্পাদনা পরিষদ যথাযথভাবে স্মারকগ্রন্থের যাবতীয় কাজ শতবর্ষ অনুষ্ঠানের আগেই সম্পন্ন করেছিলো। কিন্তু অনুষ্টানের দুইদিন আগে হটাৎ আমাকে প্রথমে শহীদুল্লাহ সাদা এরপর সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বললেন যে, অনুষ্ঠানের দিন স্মারকগ্রন্থটি দেয়া যাবে না। দেয়া যাবে না কেনো, তা অনেক পরে জানলেও সেটা বলার সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে, ঠিক সময়ে স্মারকগ্রন্থটি ইচ্ছা করে প্রকাশ না করায় শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ ও সম্পাদনা পরিষদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত, পরিশ্রম ও পরিকল্পনার প্রতি অবমাননা, অসম্মান ও অবহেলা করা হলো যে কারণে, তা হলো আর্থিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের জন্যে ‘নয় ছয়’ বলে অনেকে মনে করেছেন এবং বলেছেন। 
দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যগণসহ সর্বমোট ২৫০০ জন প্রাক্তন ছাত্র শেষপর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়েছিলেন, তাদের দেওয়া চাঁদা, স্মারকগ্রন্থের বিজ্ঞাপণ, অনুদান ও অন্যান্য খাত থেকে কি পরিমাণ অর্থ আয় হয়েছিলো ও ব্যয় হয়েছিলো তা উদযাপন পরিষদের সভা আহ্বানের মাধ্যমে ঘোষণা করা না হওয়াতে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণ হয়ে যাওয়ার মতো হয়েছে। 

২১. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ আয়োজনের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হলেও অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে এবং এখনো আছে। যেমন, অনুষ্ঠানে খাবার বন্টনে বিশৃংখলা, মঞ্চে একই নেতৃবর্গ বার বার আসন দখল করা, মঞ্চে বক্তাগণের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পরিবেশন করা, জোর করে মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেয়া, সঞ্চালক সঞ্চালনার কাজ ঠিকমতো না করা ইত্যাদি। তবে, অনুষ্ঠানের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাক্তন ছাত্রগণ তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ ইয়ারমেট বন্ধুদেরকে নিয়ে আনন্দে মেতে ছিলেন সবাই, একেবারে অনাবিল চিত্তে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানের দিন ইতিহাস হিসেবে স্মারকগ্রন্থটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকাশ না করা ছিলো পরিষদের চরম ব্যর্থতা। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের প্রায় এক বছর পর অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করা হলেও, অত্যন্ত নিন্মমানের সম্পাদনা, বাজে বাইন্ডিং, ৬০ জন রেজিস্টার্ড প্রাক্তন ছাত্রগণের ছবি না ছাপানো, শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন কমিটিতে নাম না থাকাদের নাম ঢুকানো এবং অনেকের নাম বাদ দেওয়া, সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী সাহেবের মতো বিখ্যাত মানুষদেরসহ অনেকের নাম ঠিকানা ভুল ছাপানোর মতো ঘটনাগুলো ছিলো স্কুলের নামের উপর কালিমা লেপন। গ্রন্থটির সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নামে যে ছবিসহ বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, একই সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব উভয়ের নিজ নাম ও ঐ ছবি নিজস্ব ব্যবসায়িক পণ্যের বিজ্ঞাপনে ছাপানোর কারণে শতবর্ষের ইতিহাসখ্যাত বিদ্যালয়ের মর্যাদা এবং শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের গৌরব যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়েছে বলে প্রাক্তন ছাত্ররা মনে করেছেন। সম্পাদনা পরিষদ ও লেখা বাছাই কমিটির সিদ্ধান্ত ছিলো, প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে বদিউল আলমের ছবিসহ বক্তব্য স্মারকগ্রন্থের প্রথমদিকে সদস্য সচিবের পরে থাকবে এবং সম্পাদক হিসাবে থাকবে এস.কে.এম জাহাঙ্গীর। সব পাল্টে দেয়া হয়। তবে, স্মারকগ্রন্থটিতে সকলের মোবাইল নাম্বার প্রকাশিত হওয়াতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রগণ পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ হয়েছে। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা অর্থের হিসাব, শতবর্ষ অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের ভুল ত্রুটি বা সফলতা, স্মারকগ্রন্থ কেনো অনুষ্ঠানের দিন প্রকাশ করা হলো না, স্মারকগ্রন্থ একবছর পরে কেনো প্রকাশ করা হলো, গ্রন্থের অন্যান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে মূল্যায়ন, সভা আহ্বানের দায়িত্ব প্রধানত সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ সাহেবের উপর থাকলেও, তিনি তা করতে না পারায় কুমন্তব্যও হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে, অধ্যাপক হারুন সাহেব যাবতীয় অর্থ জমা দিয়েছিলেন মেরিট কম্পিউটারের শহীদুল্লাহ সাদার হাতে, যা ছিলো আমার ব্যক্তিগত মতামতে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। এতো বড় বিশাল অংকের অর্থ লেনদেনের জন্যে কোনো অর্থ সম্পাদক পদে কেউ না থাকা ছিলো চরম ঘাটতি। নিয়মমতে, অর্থের ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া উচিৎ ছিলো ঐ সময়ের প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জনাব ছগীর মুহাম্মদ সাহেবকে। কেনো, সেটার বিশদ ব্যাখ্যা আছে এবং কারণও আছে। 

২২. পরিশেষে একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি, “বিভিন্ন ধরনের স্বাধীনতার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি হচ্ছে শিক্ষক ও ছাত্রদেরসহ অনেকের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেবল এই স্বাধীনতার ক্ষেত্রেই কোন সীমা থাকার দরকার নেই। শিক্ষার কাজ হবে আমাদেরকে সত্যের যত কাছাকাছি সম্ভব নিয়ে যাওয়া যায়। এ উদ্দেশ্যে সত্যবাদিতা শেখাতে হবে।” উক্তিটি মনিষী বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে। 

পূনশ্চঃ অনিচ্ছা সত্বেও বিদ্যালয়ের অনেক প্রয়োজনীয় ইতিহাস আপাততঃ সংক্ষেপ করতে গিয়ে, আর কিছু অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করায় ভুল বুঝার অবকাশ থাকতে পারে। যত কষ্টদায়ক ও দুঃখজনকই হোক না কেন, সে দায় ও জবাবদিহিতা লেখকের। লেখাটিতে, আগের লেখার তুলনায় অনেক কিছু তথ্য বাড়তি সংযোজন করা হয়েছে। আর এই লেখাটি স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক বাছাইকৃত ও নির্ধারিত হওয়ার পর এবং স্মারকগ্রন্থের সম্পূর্ণ ছাপানো ও বাধাই হয়ে যাওয়ার পর, এক বছর পরে প্রকাশের সময়ে বাদ দেওয়া হয়েছিলো জেনেটিক্ হীনমন্য চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে; যেভাবে বাদ দেয়া হয়েছিল বাছাইকৃত ও নির্ধারিত সম্পাদকীয় লেখাটি এবং সম্পাদক হিসেবে এস.কে.এম জাহাঙ্গীরের নাম। অন্যের প্রতি কষ্ট, শ্রম, যোগ্যতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো ব্যক্তিরা এবং যোগ্যরা দায়িত্ব পালন করলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে সময় ও সুযোগে সব কিছু ভিতর বাহির প্রকাশ করা হবে, যেটা নব প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনও বটে।

========সমাপ্ত======== 

• তথ্যসূত্রঃ 
১। স্কুল রেকর্ড
২। ভারতবর্ষের ইতিহাসঃ কোলকাতা সংস্করণ
৩। চট্টগ্রামের ইতিহাসঃ পূর্ণচন্দ্র চৌধুরী
৪। রদ্দুরঃ সাময়িকী
৫। বয়োজ্যেষ্ঠ প্রাক্তন ছাত্রগণের সাক্ষাৎকার।

লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৭৫ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র


বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক) 


আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে 


শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়; ‍asrahs; patiya; chittagong; chattogram; abdus sobhan; school; historical; পটিয়া; চট্টগ্রাম; মাওলানা আবদুস সোবহান; বিদ্যালয়; স্কুল; পটিয়ার স্কুল; চট্টগ্রামের স্কুল; ঐতিহ্যবাহী; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ৪র্থ পর্ব
শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব  

৪র্থ পর্ব

১৪. রাজনীতি দ্বারা যেহেতু দেশ ও সরকার চলে, তাই আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে রাজনৈতিক দলসমূহের মূল দায়িত্বে থেকে দেশের মানুষের সেবা করছেন বলে বিশ্বাস করেন, সর্বজনাব আহমদ নুর, আলহাজ্ব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, শামশুল আলম মাস্টার, শামশুদ্দিন আহমদ, স.ম. ইউনুচ (লেখক), মুহাম্মদ নুরুল হুদা, আইয়ুব বাবুল, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, এ.টি.এম মুহিবুল্লাহ চৌধুরী (মরহুম), এডভোকেট রফিকুল ইসলাম (মরহুম), কবিয়াল আবু ইউছুপ, নুরুল ইসলাম সওদাগর, কাজী এয়াকুব (মরহুম), সেলিম উদ্দিন, মুকিবুল ইসলাম ফারুক, মুহাম্মদ বদিউল আলম, আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী, অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, মুহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ আলী হেসেন, রেজাউল করিম রিজু (মরহুম) সহ আরো অনেকেই রাজনৈতিক মূলদল ও সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। 
বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অভিজ্ঞ ও যোগ্যতম অংশ প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরে মূল নেতৃত্বে আসার পরবর্তী পর্যায়ে অবস্থান করছেন। মূল নেতৃত্বে এসে তাঁরাও ইতিহাসের অংশ হবেন। 

১৫. ** স্বাধীনতা মুক্তিসংগ্রামে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে যাঁদের নাম খুজে পাওয়া যায়, মুক্তিযোদ্ধা শামশুল আলম (বাহুলী) প্রথম পটিয়ায় মেট্রিক পরীক্ষা সেন্টারে বোমা ফাটিয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সূচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিচালিত সরকারের সময়ে বিমান বাহিনীতে চাকুরীকালীন অবস্থায় তিনি নিহত হলে তাঁর লাশটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র জনাব শামশুদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রাখেন। এডভোকেট আবু ছৈয়দ সাহেব মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বজনাব সাবেক মেয়র শামশুল আলম মাস্টার, মরহুম শামশুল আলম চেয়ারম্যান (হাইদগাঁও), নুর মোহাম্মদ বিএসসি (ঐ), খায়ের আহমদ (ঐ), মোঃ মহিউদ্দিন চেয়ারম্যান (ঐ), আবু ছিদ্দিক (ঐ), মোস্তাফিজুর রহমান (উঃ গোবিন্দারখীল), আমির হোসেন (মল্ল পাড়া), ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম (গোবিন্দারখীল), মহিবুর রহমান (ঐ), আবুল কাশেম (ঐ), আবু তৈয়ব (ঐ), আহমদ ছফা চৌধুরী (হাবিবুর পাড়া) - আরো যাঁরা ছিলেন তাঁদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য না পাওয়াতে নামগুলি যুক্ত করতে না পারার কষ্ট থেকে গেলো। 

মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ব্যাপারে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে, এই নিবন্ধ কোন সনদের প্রমাণপত্র নয়। আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি যাঁদের নাম খুঁজে পেয়েছি, তাঁদের নামগুলোই যুক্ত করেছি । 

১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১ টায় ১ম বার এবং দুপুর ১টায় ২য় বার পটিয়াতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী জঙ্গী বিমানের মাধ্যমে পটিয়া থানার মোড়ে, আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে, পিটিআই - এ বোমাবর্ষণ করলে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন এবং তখনকার উত্তর পাশের ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ঐদিনের বোমাবর্ষণে হাইদগাঁও গ্রামের ডা. সৈয়দ আহমদ, গোবিন্দারখীলের ফয়েজুর রহমান, ঈদুল মল্ল পাড়ার আমির আলী, হাবিবুর পাড়ার উম্মুল আলী, পোস্ট অফিস আধুরো বাড়ীর আবুল খায়ের, আল্লাই কাগজী পাড়ার আমিনুল হক, দক্ষিণ ভূর্ষির বিজয় দে, কাজী পাড়ার আলী আকবর, পশ্চিম গোবিন্দারখীলের নাছিমা খাতুন, কেলিশহরের দানু মিয়া,পশ্চিম গোবিন্দারখীলের ছৈয়দুল হক, রিক্শাচালক দুধু মিয়া সহ ২০ জন ব্যক্তি শহীদ হন বলে জানা যায়। 

১৬. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ক্যাজুয়ালসহ ৩২ জন শিক্ষক মহৎ শিক্ষাদানের কাজে, ২ জন অফিস সহকারী, ১ জন গবেষণা সহকারী, ৩ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আর বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১৮০০ জন। বিদ্যালয়ের গৌরবজনক ইতিহাস হচ্ছে ১৯৪৭ সালে দপ্তরী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে জনাব গোলাপুর রহমান ১৩ নভেম্বর ১৯৯২ ইং তারিখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের জন্য নিরলস সেবা দিয়ে গিয়েছেন। জানা যায় যে, মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব বেনী মাধবকে (দপ্তরী) নিজে নিয়োগ দিয়েছিলেন। হাইদগাঁও নিবাসী বেনী মাধব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিরলসভাবে প্রায় ৬০ বছর বিদ্যালয়ের সেবা দিয়ে মৌলানা সাহেবের সন্মান রক্ষা করে গিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্যে বাবু দেবেন্দ্র ধর (দেবেন্দ্র স্যার) স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায় এবং বিদ্যালয়ের একটি বড় পাঠাগার গড়ে তোলায় তাঁর একনিষ্ঠ ভুমিকা ছিলো। বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে এবং অপরাপর পদে থেকে যাঁরা দায়িত্ব পালন করে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়া শিখতে অবদান রেখেছিলেন তাঁদের সবার নাম ঠিকানাসহ তথ্য তুলে ধরতে পারলে অনুকরণীয় হতো। সময় ও সুযোগ না থাকায় সম্ভব হলো না। 

১৭. নৈসর্গিক ও অবকাঠামোগত অবস্থা কেমন তা জানা যেতে পারে। আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল তোরণ দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই নাক সোজা সামনে দ্বিতল শ্রেণীকক্ষসহ বিজ্ঞান ভবন, ডানে-বামে দুটি ছোট মাঠ, বামদিকের মাঠের দক্ষিণে দ্বিতল শ্রেণীভবন। ডানদিকের মাঠের উত্তরে নতুন চারতলা ভবনে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষসহ শিক্ষক কক্ষ ও শ্রেণীভবন। সামনে এগিয়ে গেলে পিছনে পড়বে দ্বিতল শ্রেণীভবন। সামনে-বামে বিশাল বিদ্যালয় হলঘর। ঘুরে বিজ্ঞান ভবনের পিছনের দিকে গেলে বিদ্যালয় খেলার মাঠ, খেলার মাঠের উত্তর দিকে দ্বিতল শ্রেণীভবন, বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে পুকুরের পাড়ে শুয়ে আছেন পটিয়ায় শিক্ষা প্রসারের অগ্রদূত ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব। মৌলনা সাহেবের পাশে তাঁর স্ত্রীর কবরটিও রয়েছে। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন, অফিস ভবন ও পূর্ব পাশের দ্বিতল ভবনের সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার যা বিদ্যালয়ের ১৯৯১ ব্যাচের ছাত্রগণ তাদের নিজস্ব উদ্যোগে এবং অর্থে নির্মাণ করে দেন, বিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে। স্কুলের সামনে আরাকান সড়কের পাশ ধরে মূল ফটকের দুই ধারে দ্বিতল ভবনের সবগুলি দোকানসমূহ স্কুল মালিকানাধীন ছিলো। বর্তমানে গেইটের দক্ষিণ পাশের মার্কেটসহ দোকানগুলি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অনেকের মতে এই মার্কেটের কারণে স্কুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে ও স্কুল ব্যবসার দিকে ঝুকেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, এই মার্কেটের কারনে গাড়ীর শব্দ দূষণ থেকে স্কুল নিরাপদ হয়েছে। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও শুভাকাঙ্খী বোদ্ধা জনেরা অনেকেই মনে করেন, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে স্কুলের লেখাপড়ার মানের অবনমন ঘটেছে। স্কুল দরদীগণ মনে করেন, পরিচালনা কমিটির কিছু সদস্য ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যে স্কুল কমিটিতে নির্বাচিত হতে চান। শিক্ষার মান রক্ষা ও অগ্রগতির জন্যে বেশীরভাগ সদস্য আসেন না বলে প্রায়ই শুভাকাঙ্খীরা মত প্রকাশ করেন। মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেবের অনেক কষ্ট ও ত্যাগে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বা শিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক অনিয়ম কিংবা অপকর্মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে, এর চেয়ে অপমান, অসন্মান, লজ্জাকর ও আত্মঘাতী আর কিছু হতে পারে না।

১৮. মৌলানা আবদুস সোবহান ও রাহাত আলী দারোগা সম্পর্কে যা জানা যায়। মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৫৩ সালের ১১ জানুয়ারী, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া পৌরসভার উত্তর গোবিন্দারখীল গ্রামের মুন্সি বাড়ী নামক পাড়াতে। তাঁর পিতার নাম মুন্সি আলী আকবর। মৌলানা সাহেব মারা যান ১৯১৮ সালের ৭ মে। ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াজ নসিহত ও শিক্ষকতা করতেন। রাহাত আলী দারোগা সাহেব জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর গ্রামে। পটিয়া থানায় দারোগা হিসেবে চাকুরী করতেন। তাঁর জন্মের সন তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মুছা (বি এড) স্যার এর অনুরোধে স্কুল শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছগীর মোহাম্মদ সাহেবের উদঘাটিত তথ্য অনুযায়ী রাহাত আলী দারোগা মারা যান ১৯৪৩ সালে, শনিবার। তারিখ জানা গিয়েছে বাংলা ১ ভাদ্র। দারোগা সাহেব নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। তাঁর পিতার নাম রহমত আলী সওদাগর বলে জানা গিয়েছে।

চলবে..

৫ম (শেষ) পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন ছাত্র


বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক) 


আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে 

শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়; ‍asrahs; patiya; chittagong; chattogram; abdus sobhan; school; historical; পটিয়া; চট্টগ্রাম; মাওলানা আবদুস সোবহান; বিদ্যালয়; স্কুল; পটিয়ার স্কুল; চট্টগ্রামের স্কুল; ঐতিহ্যবাহী; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ৩য় পর্ব

শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’

১ম পর্ব২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

৩য় পর্ব

১১. আবদুস সোবহান সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা দেশ ও বিদেশের মাটিতে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখে খ্যাতিমান ও যশস্বী হয়েছেন তাঁদের তালিকা অনেক বড়। 
শুধুমাত্র প্রেরণাদায়ক কিছু নাম তুলে ধরা হলো যারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে এই স্কুল থেকে পাশ করেছিলেন। 
১৯১৮ সালে ১ম বার ১ম বিভাগ পাওয়া ৭ জনের মধ্যে বিখ্যাত ৪ জন ছিলেন তৎকালীন স্কুল পরিদর্শক আবদুর রহমান, চিকিৎসক ডাঃ আমিনুল হক, আইনজীবি এড. মোখলেছুর রহমান, চিকিৎসক ডাঃ বিনোদ বিহারী ভট্টাচার্য্য। অতঃপর এ বিদ্যালয় থেকে পাশ করে শিক্ষাবিস্তার ও মানবসেবায় যাঁরা সুবিশেষ অবদান রেখেছিলেন সর্বশ্রদ্ধেয় তাঁরা হলেন, আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র পিতা নুরুজ্জামান চৌধুরী (১৯২১), সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯২২), সাবেক শিক্ষক আলী আহমদ (১৯২২), পটিয়া আদর্শ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র গুপ্ত (১৯২৪), উকিল আলী আহমদ এম.এ.বি.এল (১৯২৫), ইঞ্জিনিয়ার ফজল আহমদ (১৯৪১), সাবেক কলেজ পরিদর্শক শিক্ষাবিদ শামশুল আলম এম.এ.বি.টি.এম.এড (১৯৪২), ঢাকা মেডিকেলের সাবেক সুপার ডাঃ এম. এ ছবুর (১৯৪৩), সাবেক চীফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ কামাল উদ্দিন খাঁন (১৯৪৩), সাবেক আণবিক বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার সুলতান আহমদ (১৯৫১), সাবেক ব্যাংক ডিজিএম মোঃ ইউসুফ (১৯৫২), অধ্যাপক (কানাডা) এ.বি.এম শাহাদাৎ হোসাইন (১৯৫৪), প্রিন্সিপাল খায়রুল বশর (১৯৫৭), প্রিন্সিপাল ফরিদুল আলম (১৯৫৯), প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান মাস্টার (১৯৬১), সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম (১৯৬১), প্রফেসর আহমদ ছৈয়দ (১৯৬২), সাবেক প্রধান শিক্ষক এস.এম. মুছা (১৯৬২), অধ্যাপক রহমত আলী (১৯৬২), সাবেক ডীন (চবি) ড. কাজী আহমদ নবী (১৯৬৪), অধ্যক্ষ প্রফেসর সফিকুল আলম (১৯৬৪), অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শহীদুল্লাহ (১৯৬৬), অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল আলীম (১৯৬৬), দুবাই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. নুরুল আলম (১৯৬৭), সাবেক ঔষধ প্রশাসক মুহাম্মদ এনামুল হক (১৯৬৭), সাবেক টি.ও. হাশমত আলী (১৯৬৭) প্রমুখ। সকলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে পাশ করা। 

স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যাঁরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিক্ষা-গবেষণায় অবদান রেখেছেন এবং রাখছেন তাঁদের সকলের সর্বশেষ অবস্থানসহ নামের হালনাগাদ তালিকা এতো বড় যে, নামগুলো প্রকাশ আলাদা আরেকটা নিবন্ধ ছাড়া সম্ভব নয়। তবে, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণের মধ্যে প্রশংসনীয় সফলতার দাবীদারগণের তালিকা বিশাল হলেও, তাঁদের নামগুলি ভিন্নভাবে সামনে আনা বাঞ্চনীয় এবং প্রেরণাদায়ক হবে বলে স্বীকার করছি। 

১২. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় ‘শুধুমাত্র মুসলমান ছাত্রদের স্কুল’ নামক অপবাদ আর রটনা ঘুচিয়ে যে বিখ্যাত প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণ এই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে কীর্তি ও সুনাম অর্জন করেছিলেনঃ- 
বিখ্যাত চিকিৎসক ডা. বিনোদ বিহারী চৌধুরী (১৯১৮), সাবেক প্রধান শিক্ষক জানকী রঞ্জন বিশ্বাংগ্রী (১৯২২), দোহাজারী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক হরিপদ নন্দী (১৯২৩), বার্মাতে (মিয়ানমার) সাবেক প্রঃ কাব্যতীর্থ বীরেশ্বর ভট্টাচার্য্য (১৯২৪), পটিয়া হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র গুপ্ত (১৯২৪), দোহাজারী হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক রুহিনী মজুমদার (১৯২৮), হাবিলাসদ্বীপ হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু চক্রবর্তী (১৯২৮) প্রমুখগণসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বগণ।
আরো একটি স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐ সময়ে স্কুলের মঞ্জুরী পেতে উনাইনপুরা নিবাসী ভিক্ষু কৃপাশরণ মহাস্থবির মহোদয় সার্বিক সহযোগীতা করেছিলেন বলে, সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছগীর মোহাম্মদ সাহেবের নিকট রক্ষিত থাকা তথ্য থেকে জানা যায়। 

১৩. আমার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা অনুসারে, আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যাঁরা বিভিন্ন এলাকায় জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন এবং করছেন তাঁরা হলেনঃ- 
পটিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, পটিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল, সাবেক মেয়র শামশুল আলম মাস্টার, সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম সওদাগর, ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মহিউদ্দিন, সাইফুদ্দিন খালেদ বাবুল, মোহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শামশুল আলম এম.কম, আজমল হোসেন জামাল প্রমুখ। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যাঁরা পটিয়া পৌরসভার বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরগণ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের বর্তমান ও সাবেক ওয়ার্ড সদস্যগণ দেশ ও জনগণের জন্যে সেবা করছেন বলে দাবীদার তাঁদের সংখ্যাও অনেক বড়। দেশের মানুষ এ সকল জনপ্রতিনিধিদেরকে তাঁদের কাজ ও সেবা অনুযায়ীই শ্রদ্ধা করবে। জনপ্রতিনিধিদের নাম ঠিকঠাক মতো দিতে না পারলে, অনেকের মনোকষ্টের কারণও হতে পারে। অনেকের নাম খুঁজে না পাওয়াতে এবং ঠিকমতো তথ্য না পাওয়ায় প্রকাশ করতে না পারাটাও কষ্টের ব্যাপার।

চলবে..

৪র্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন ছাত্র


বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক) 


আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে 

শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়; ‍asrahs; patiya; chittagong; chattogram; abdus sobhan; school; historical; পটিয়া; চট্টগ্রাম; মাওলানা আবদুস সোবহান; বিদ্যালয়; স্কুল; পটিয়ার স্কুল; চট্টগ্রামের স্কুল; ঐতিহ্যবাহী; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ২য় পর্ব

শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’

১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

২য় পর্ব

৭. প্রধান শিক্ষক হিসেবে যাঁরা ছিলেন। বিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যস্ত প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিখ্যাত আইনবিদ নোয়াখালী নিবাসী আবদুল গোফরান বিএ.বিএল। তিনি পরে অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী হয়েছিলেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় কে আজ পর্যন্ত স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ২৬ জন শিক্ষাবিদ প্রধান শিক্ষক পদে আসীন হয়েছেন। এঁদের মধ্যে চারজন দু’বার করে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়কে সকল ধরণের সাফল্যের উচ্চ শিখরে আসীন করেছিলেন, ২৭ নভেম্বর ১৯৯৮ ইং তারিখে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ মুছা বি.এড স্যার। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা ‘শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ মুছা স্মৃতি বৃত্তি’ প্রকল্প চালু করেছিলেন। বিদ্যালযের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের জন্য ২০১৩ সালে উক্ত বৃত্তি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৩ সালে শতবর্ষ অনুষ্ঠানটি হতে না পারলেও, “শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ মুছা স্মৃতি বৃত্তি” আর চালু রাখা যায়নি। শতবর্ষ উদযাপনকালীন সময়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রধান শিক্ষক ছগীর মোহাম্মদ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ইন্তেকাল করেন। স্কুলের বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে যে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও শিক্ষা উদ্যোমী কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না কিংবা থাকছেন না। ২০১৮-১৯ সালের দিকে শরীফ সাহেব নামের একজন চৌকস প্রধান শিক্ষক আসলেও থাকলেন না। কিন্তু, উনি কেনো চলে গেলেন তা জানা যায়নি! বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ যথাযথ যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে না পারার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে সবাই মনে করেন। স্কুল পরিচালনা কমিটিতে, বর্তমানে যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন তারা আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো একটি বিদ্যালয় পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নে সত্যিকার কোনো যোগ্যতা রাখেন কিনা, এটা বর্তমান সময়ে সকলের প্রশ্ন। বাস্তবে, আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে জুনিয়র শিক্ষকদের শিক্ষা ও এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রম তদারক করতে পারেন বা পরামর্শ দিতে পারেন এমন কমিটি সদস্য কারা এসেছেন, বিগত কয়েকটি কমিটিতে, এ ব্যাপারে জানার, বলার এবং দাবী করার অধিকার সকল প্রাক্তন ছাত্রদের এবং স্কুল দরদীগণের রয়েছে; যাঁরা মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেবের অবদানকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। 

৮. বোর্ডের অধীনে চালু থাকা মাধ্যমিক সনদ পরীক্ষা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মেট্রিক, ২০০০ সাল পর্যন্ত এস.এস.সি, অতঃপর অদ্যাবধি পর্যন্ত গ্রেডিং পদ্ধতিতে এস.এস.সি হিসেবে স্বীকৃত। আরো আগে মেট্রিক পরীক্ষা, এন্ট্রান্স পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত ছিলো। সে মতে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯১৮ সাল হতে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ৬৯৭ জন এনট্রান্স ও মেট্রিক পাশ, ১৯৬৩ সাল হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩,৬৪৯ জন ডিভিশান পদ্ধতিতে এস.এস.সি পাশ, ২০০১ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৫৭১ জন গ্রেডিং পদ্ধতিতে এস.এস.সি পাশ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার সাক্ষর রেখেছেন এবং রাখছেন। ২০১৫ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র শেষ পাঁচ বছরে মোট ১৩০১ জন পাশ করেন। আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনেকজন বিদ্যালয় অন্তঃপ্রাণ শুভাকাঙ্খীগণের মনে দুঃখ, ব্যাথা ও হতাশা আছে। আবার উক্ত ফলাফল নিয়ে কারো কারো মুখ থেকে অতি সমালোচনাও শোনা যায়। সবাই বর্তমানে জিপিএ ৫ দিয়ে ফলাফল হিসাব করতে চান। বিদ্যালয়ের সর্বশেষ পাঁচ বছরের ফলাফলটা যাচাই করা যায়। এস.এস.সি ২০১৫ সালে ২৭২ জনে ২৩৫ জন, ২০১৬ সালে ২৮৪ জনে ২৭২ জন, ২০১৭ সালে ২৯৭ জনে ২৩৮ জন, ২০১৮ সালে ৩০৩ জনে ২২০ জন, ২০১৯ সালে ৩৯৬ জনে ৩৩৬ জন ছাত্র পাশ করেছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে মোট ১৩০১ জন ছাত্র পটিয়ার একটা বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়া সত্যিই গৌরবের। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষয়িত্রীগণকে সর্বশেষ উক্ত পরিমাণ ছাত্রদেরকে পাশ করানোর জন্য বাহবা দিতে হয়, প্রশংসা করতে হয় এবং পুরষ্কৃত করতে হয়। 

বাস্তবে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে আবদুস সোবহান রাহাত আলী স্কুলে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, কমিটি সদস্য ও বিভিন্ন ব্যক্তির চাপ ও তদবীরে অতিরিক্ত ছাত্র এবং কম মেধাবী ছাত্র ভর্তি করানোর কারণে তাদেরকে প্রতিটি উপরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করানো দুঃসাধ্যকর ব্যাপার হয়। পটিয়া সদরের অন্য কয়েকটি স্কুলের মতো বাছাই করে ছাত্র ভর্তি করানো যায় না, যদিওবা ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। ভালো ফলাফলটা কিভাবে প্রত্যাশা করা যায় ? আসলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে, গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে হয়। শিক্ষকগণের একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ত্রুটি থাকলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশোধন কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোচ্চার হওয়া যায়। কিন্তু, তা নিয়ে রাজনীতি শোভন যেমন নয় তেমনি গ্রহণযোগ্যও নয়। সত্যটা হচ্ছে, বিদ্যালয়ের দু’একজন শিক্ষক বিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয় বহির্ভুত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কিছু প্রচার থাকলেও, সকল শিক্ষকদের উপর বদনামটা দেয়া পীড়াদায়ক। 

৯. প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেবের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় বিদ্যালয়ের অপরাপর প্রতিষ্ঠাতাগণ, পরিচালনা পরিষদের সদস্যগণ, শিক্ষকমন্ডলী ও সহযোগীগণ বিদ্যালয়ের সফলতা ও প্রতিষ্ঠার জন্যে কি পরিমাণ কর্মনিষ্ঠ, ঐকান্তিক ও নিঃস্বার্থবান ছিলেন তার একটি তুলনামূলক নমুনা তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে বিদ্যালয়ের সকল প্রাক্তন ছাত্রগণ ও শুভার্থীগণ গৌরব অনুভব করতে। ১৯১৮ সালে বিদ্যালয় থেকে ১ম বার ১৬ জন পরীক্ষার্থী মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭ জন প্রথম বিভাগ এবং ৩ জন দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিলেন। তন্মধ্যে ৪ জন নিজেদের কর্মদক্ষতা গুণে পরে বিখ্যাত হয়েছিলেন। সাবেক এম.পি নজরুল ইসলাম সাহেবের পিতা সাবেক স্কুল পরিদর্শক মরহুম আবদুর রহমান সাহেব তাঁদের একজন। 
উল্লেখ্য যে, বিদ্যালয় ১৯১৮ সালে ১ম বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অধ্যবদি একবারও এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাদ পড়েছে বলে জানা যায়নি। অথচ ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পার্শ্ববর্তী স্কুল ২২ বছর পর ১৮৬৭ সালে প্রথমবার বোডের্র পরীক্ষায় মাত্র ৩ জন অংশ নিয়ে ১ জন পাশ করতে পেরেছিলেন। ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়াতে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত ঐ বিদ্যালয়ের বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাতিল করে দেয়া হয়। পুনঃঅনুমতি পেয়ে ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত আবার ঐ বিদ্যালয় বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়েও কোন ফলাফল করতে পারেনি। ১৮৮৬ সালে হাইদগাঁও নিবাসী বিখ্যাত আইনজীবি অন্নদা চরণ দত্ত (৩ জনে ১ জন) ১ম বিভাগে পাশ করে ভালো ফলাফল করার পরের পর্ব থেকে বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক ঐ বিদ্যালয় থেকে পাশ করেছিলেন এবং দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখেছেন, রাখছেন। 

আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই উদ্যোক্তাগণ ও সম্পৃক্তগণকে, পটিয়ায় শিক্ষা প্রসারে নিঃস্বার্থ কর্মতৎপরতায় মৌলানা সাহেব যে কত বেশী উৎসাহ ও প্রেরণা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, উল্লিখিত তথ্য তারই প্রমাণ। 

১০. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসাবে স্কুলের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে যে সকল নিঃস্বার্থ ব্যক্তিগণ বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ভুমিকা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সর্বজনাব আবদুর রহমান, মোখলেছুর রহমান, মাওলানা নুরুচ্ছফা, খলিল মাস্টার, মোঃ নজরুল ইসলাম এম.পি, এখলাছুর রহমান চেয়ারম্যান, ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, ডাঃ কামাল উদ্দিন, হামিদুর রহমান, হামিদুল হক, গাজী আমিন শরীফ, হাজী কবির আহমদ সওদাগর, ডাঃ কে আখতার, বদিউর রহমান মাস্টার, অধ্যাপক মোঃ ইসহাক, আবদুল হক আল্লাই, মোঃ হানিফ, ব্যাংক ম্যানেজার আমির হোসেন প্রমুখগণ অগ্রগন্য। সদ্য সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ সোলাইমান সাহেব একটি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। অনেক শ্রদ্ধেয় জনের নামের সঠিক তথ্য না পাওয়ায় দেওয়া যায়নি। যাঁদের নামগুলি পেয়েছি এবং নাম দেয়া প্রয়োজন মনে করেছি তাঁদের নামগুলি দিয়েছি। আবার অনেকের নাম না দেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।

চলবে..

লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন ছাত্র

৩য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক) 


আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে 

শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়; ‍asrahs; patiya; chittagong; chattogram; abdus sobhan; school; historical; পটিয়া; চট্টগ্রাম; মাওলানা আবদুস সোবহান; বিদ্যালয়; স্কুল; পটিয়ার স্কুল; চট্টগ্রামের স্কুল; ঐতিহ্যবাহী; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ১ম পর্ব

শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’

১ম পর্ব

১. চট্টগ্রাম জেলার পটিয়াতে ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’ নামক আলোর শিখা বিকীরণকারী বিদ্যায়তনটির শত বছর ব্যাপী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান অনেক দীর্ঘ। তবে এই ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও সকলের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার দুঃসাহসিক চেষ্টা করা হলো। 

২. প্রথমত, ‘রাহাত আলী হাই স্কুল’ নামক একটি উচ্চ ইংরেজী স্কুল বা হাই স্কুল ঐতিহাসিক কি উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা প্রথমেই প্রনিধানযোগ্য ও মূল্যায়নের দাবীযোগ্য। 
পূর্ব বাংলাসহ তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন চলছিলো। বাংলা ছিলো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বারুদ ঘর। তাই ব্রিটিশরা ‘বঙ্গ-ভঙ্গ আইন ১৯০৫’ তৈরী করে বাংলাকে ভাগ করলো, যা ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কার্যকর করা হয়েছিলো। স্বদেশী স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা এর বিরোধীতা করে আন্দোলন শুরু করলেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশরা আবার ‘বঙ্গ-ভঙ্গ রহিত আইন-১৯১১’ তৈরী করে বাংলাকে ভাগ করা রহিত করলো। তবে ‘বঙ্গ-ভঙ্গ আইন’ বাতিল করতে হবে বুঝতে পেরে ব্রিটিশ শাসকরা ভারত বাংলায় তাদের শাসন সংস্কারের ধোঁয়া তুলে, ১৯০৯ সালে ‘মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন’ নামে একটি আইন প্রবর্তন করলো। আইনটির বিপদজনক বিষয় ছিলো, ভারত-বাংলায় প্রথম সাম্প্রদায় ভিত্তিক নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন। ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য ছিলো, ঐ সময়ে আধুনিক শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা মুসলমানদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে ধর্মীয় বিভেদ ও হানাহানি সৃষ্টি করা। 

দেশের অন্যান্য স্থানের মহান মনিষীদের মতো, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়াতে মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব সমূহ বিপদের সম্ভাবনা বুঝতে পারলেন। এ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হানাহানি রোধে মুসলমানগণসহ সব সম্প্রদায়কে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে মৌলানা সাহেব তাঁর পরিচালিত মক্তবটিকে ‘উচ্চ ইংরেজী স্কুল বা হাই স্কুল’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। মৌলানা সাহেবের সেই স্কুলটি আমাদের জ্ঞান চর্চার বাতিঘর ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’। 

৩. প্রচার অনুযায়ী, ‘পটিয়া থানার মোড়ের মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদটির দক্ষিণ দিকের জায়গাটিকে বলা হতো মসজিদ বাড়ি। এর পাশে ছিলো একটি মক্তব। শ্রুতি অনুযায়ী, ছদু মল্ল প্রকাশ ছদু তালুকদার পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব মক্তবটি চালাতেন। প্রয়োজনের নিরিখে তিনি এখানে প্রথমে ইংরেজী মাইনর স্কুল করলেন। ১৯১৪ সালে স্কুলটিকে উচ্চ ইংরেজী স্কুল বা হাই স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন। দুষ্কৃতিকারীরা ঐসময়ে স্কুল ঘরটি পুড়ে দিলো। মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেবের অন্তর কেঁদে উঠলো। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের উক্তি, “যে আলো পথ দেখাইতে প্রজ্জ্বলন করা হয়, সে আলো যদি জ্বালাইয়া পুড়াইয়া দিবার জন্য ব্যবহারিত হয় তাহা হইলে ধ্বংসই ডাকিয়া আনা হয়।” 

মৌলানা সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন যে, কেউ সৃষ্টি করেন, আর কেউ ধ্বংস করে। তিনি পটিয়া থানার তৎকালীন সময়ের দারোগা রাহাত আলী সাহেবের নিকট আইন ও নিরাপত্তার সহযোগীতা চাইলেন। শিক্ষানুরাগী দারোগা সাহেব উদারচিত্তে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। মৌলানা সাহেব রাহাত আলী দারোগাকে নিয়ে আবার দক্ষিণ পাশে নতুন স্কুল ঘর নির্মাণ করলেন এবং মৌলানা সাহেব নিজে অকৃতদার রাহাত আলী দারোগার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্কুলের নাম দিলেন ‘রাহাত আলী হাই স্কুল’। ১৯১৮ সালে মৌলানা সাহেবের মৃত্যুর পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ মৌলানা সাহেবের স্মৃতি রক্ষার্থে স্কুলের নাম দিলেন ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’। আজাবধি তাইই আছে। 

৪. সূত্র মতে, স্কুল নির্মাণ আর স্কুল পরিচালনার জন্য রাহাত আলী দারোগা সাহেব মৌলানা সাহেবকে এককালীন কিছু অর্থ প্রদান করেন এবং পটিয়া থানার প্রতিটি মামলায় দুই পয়সা (অর্ধেক আনা) হারে ‘স্কুল তহবিল’ গঠনের জন্যে অর্থ প্রদান করার নিয়ম তৈরী করেছিলেন বলে জানা যায়। এর সাথে মৌলানা সাহেব ওয়াজ-মাহফিল করে যে অর্থ কড়ি পেতেন তা থেকে নিজের পরিবারের জন্যে সামান্য রেখে বাকী প্রায় সবটাই স্কুল তহবিলে জমা দিতেন। 

ড. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতে, “জ্ঞানবৃক্ষের ফল গ্রহন করিয়াছে বলিয়া সে বেচারী চিরদিনের জন্য শান্তিস্বর্গ হইতে বিচ্যুত”। 

মৌলানা সাহেবের অবস্থা ঠিক তেমনটাই ছিল। সবার চোখে ঘুম আছে, মৌলানার চোখে ঘুম বলতে ‘স্কুল প্রতিষ্ঠার মন্ত্র-সাধন’। অর্থ আর মানুষ থাকলেতো চলবেনা, স্কুলের জন্যে যায়গা চাই। মৌলানা সাহেব মিনতি জানালেন ছদু মল্ল প্রকাশ ছদু তালুকদার পরিবারের সদস্যদের কাছে। সত্য কথা, উদার চিত্তে তাঁরাও এগিয়ে এলেন। রটনা, ঘটনা ও মুখ-ব্যঞ্জনাময় প্রবাদ প্রচলন যাইই থাকুক না কেন, ঐ সময়ে স্কুলের নামে প্রয়োজনীয় জমি হস্তান্তরিত না হলে দুষ্কৃতিকারীগণ আর ষড়যন্ত্রকারীগণই জয়লাভ করতো, আর মৌলানা আবদুস সোবহান সাহেব হৃদয়ে আঘাতপ্রাপ্ত ও অপমানিত হতেন। অতএব, তখনকার সংকটাপন্ন সময়ে স্কুলের জন্যে জমি হস্তান্তরকারীগণের নামগুলিও জানা প্রয়োজন। জমির দাতাগণ ঐ সময়ে স্কুলের জন্যে জমি দান করেছিলেন নাকি জমি বিক্রয় করেছিলেন এমন প্রশ্ন তাঁদের মুখেই শোভা পায় যাঁরা এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় মৌলানা সাহেবের স্বপ্নকে বড়ো মনের দৃষ্টিতে বিবেচনা করতে পারেননি। 

৫. ইতিহাসের স্মৃতিময় সময়, ১৯১৪ সাল। ঐ সালেই মসজিদের দক্ষিণ সীমানা থেকে পটিয়া স্কুলের উত্তর সীমানা পর্যন্ত মোট ২.৫৬ (দুই দশমিক পাঁচ ছয়) একর বা দুই শত ছাপ্পান্ন শতক জমি প্রথম পর্বে মৌলানা আবদুস ছোবাহান সাহেবের চেষ্টা ও তদবিরে ছদু তালুকদার পরিবারের সদস্যরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছদু তালুকদারের তিন পুত্র আলী আহমদ, আমির হোসেন, আকাম উদ্দিন হস্তান্তর করলেন। 
১৯২৪ সালে চট্টগ্রামে আর এস জরিপ শুরু হয়। স্কুলের মূল জায়গার আর এস জরিপ রেকর্ডীয় চৌদ্দটি খতিয়ানে ২.৫৬ একর জমির উপরোস্ত মালিক হিসেবে যাঁদের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেনঃ- ১)আকাম উদ্দিন, ২) আমিন শরীফ, ৩) আমির হোসেন, ৪) আনছুর আলী, ৫) ছবির আহমদ, ৬)হাবিজের রহমান, ৭) ওবেদর রহমান, ৮) মতিয়র রহমান, ৯) আলী আহমদ, ১০) মনির আহমদ, ১১) ফজল আহমদ, ১২) আহমদর রহমান, ১৩) নুর আহমদ, ১৪) ছৈয়দ আহমদ, ১৫) ছবুরা খাতুন, ১৬) আকিমা খাতুন, ১৭) আবিদা খাতুন, ১৮) আতরজান, ১৯) ময়মুনা খাতুন, ২০) দেলোয়ার হোসেন, ২১) কেরামত আলী, ২২) আবুল খায়ের। সবার সাকিন পটিয়া। স্কুলের নামের রেকর্ড খতিয়ানে যেহেতু এঁদের নাম রয়েছে, তাই এঁরা সকলেই আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক গৌরবের অংশীদার। উক্ত রেকর্ড খতিয়ান সমূহে স্কুলের পক্ষে দখলকার মালিক হিসাবে নীচের কলামে তৎ সময়ের স্কুল পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বড়উঠান নিবাসী ফজলর রহমান পিতা- হামিদ আলী’র নাম খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে, বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের পিছনের .৮৫ (দশমিক আট পাঁচ) একর বা পচাশি শতক জমি যেখানে অনেক পূর্বে একটি মজা দল পুকুর ছিলো বলে জানা যায়, যা ‘আবু তোরাব পুকুর’ এবং পরে ‘উতুম্মে পুকুর’ নামে পরিচিত ছিলো। এটি ভরাট হয়ে জমিতে পরিণত হলে পূর্বের মালিক দাতাগণের ওয়ারিশগণ হতে স্কুলের নামে হস্তান্তরিত হওয়ার দলিল পাওয়া যায়। 

সর্বশেষ, ১৯৯৬ সালে .০৮৭৫ ( দশমিক শূণ্য আট সাত পাঁচ) একর বা পৌনে নয় শতক জমি সর্ব পশ্চিম উত্তর কোণায় স্কুল কর্তৃপক্ষ খরিদ করে। বর্তমানে স্কুলের নামে ব্যবহার উপযোগী জায়গার পরিমাণ ৩.৫৮৭৫ (তিন দশমিক পাঁচ আট সাত পাঁচ) একর বা তিন শত পৌনে ঊনষাট শতক। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় নয় কানি। সবটুকু জায়গার সর্বশেষ রেকর্ড নামজারী খতিয়ান আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামেই প্রচারিত ও প্রকাশিত আছে।
তবে, পরবর্তীতে যাঁরা স্কুলের জন্যে ছাত্রাবাস ভবন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবন, আইসিটি ভবন, পাঠাগার ভবন ও আলাদাভাবে শিক্ষকদের জন্যে স্টাডি ভবন নির্মাণের জন্যে পশ্চিম পাশে থাকা জমি খরিদ করে বিদ্যালয়ের নামে দিতে পারবেন, যদি কেউ এমন শিক্ষানুরাগী দাতাগনের সমন্বয় ঘটে। 
 
৬. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা হিসেবে অপরাপর যাঁদের নাম পাওয়া যায় তাও উল্লেখ করার দাবী রাখে। ১৯৮৪ সালে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মুছা বি.এড স্যারের সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাথে যুক্ত হন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী হামিদুল হক সাহেব এবং তিনি দীর্ঘতম সময় ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি ও পরে সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যালয় করিডরের দক্ষিণ পাশের উত্তরমুখী ভবনের উপরের তলায় হামিদুল হক সাহেব তাঁর পিতার নামে “আলহাজ্ব আহমদর রহমান ছাত্রাবাস” নিজ অর্থে নির্মাণ করে দেন। উক্ত ভবনের নীচতলা নির্মিত হয়েছিলো সাবেক থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক স্কুল সভাপতি মরহুম হামিদুর রহমানের উদ্যোগে এবং চেষ্টায়। হামিদুল হক সাহেবের অনুরোধে উক্ত ভবনের উপরের তলার পশ্চিম পাশের ২নং কক্ষটি আলহাজ্ব আখতার হোসেন ফিরোজ তাঁর পিতা আবুল ফজল স্মরণে নির্মাণ করে দেন। অতপরঃ হামিদুল হক সাহেবের চেষ্টায় এবং অনুরোধে এস. আলম মাসুদ সাহেব তাঁর পিতা মরহুম মোতাহেরুল আনোয়ার স্মরণে পূর্বপাশের পশ্চিমমুখী ভবনের নীচতলা সম্পূর্ণ বি.এড মুছা স্যারের সময়ে এবং বাকী কাজ বি.কম মুছা স্যারের সময়ে নির্মাণ করে দেন। (হামিদুর রহমান এবং হামিদুল হক একই ব্যক্তি নন)। অতঃপর, হামিদুল হক সাহেবের অনুজ, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সোলাইমান সাহেব নিজ অর্থে বিদ্যালয়ের পিছনের মাঠের উত্তর পাশের দক্ষিণমুখী ভবনের উপরের তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে দেন। উক্ত ভবনের নীচের তলার নির্মাণ কাজ ইতোপূর্বে এডিবি’র অর্থে সম্পন্ন হয়। সাবেক সভাপতি সোলাইমান সাহেবের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীরটি নির্মিত হয় বলে জানা যায়। 
বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে থাকাবস্থায় ২০১০ সালের ৮ জুন হামিদুল হক সাহেব মারা গেলে, তাঁর স্মরণে আয়োজিত শোকসভার বিশাল সমাবেশে, পটিয়ার মাননীয় সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী সাহেব উত্তর পাশের দক্ষিণমুখী চারতলা ভীতবিশিষ্ট ভবনের নীচতলা হামিদুল হক সাহেবের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘হামিদুল হক ভবন’ নামকরণ করেন। উল্লেখ্য যে, উত্তর পাশের এই ভবনটি মাননীয় সাংসদ মহোদয়ের উদ্যোগে সরকারীভাবে মঞ্জুরীকৃত বলে জানা যায়। বিদ্যালয়ের দাতা তালিকায় সর্বজনাব এনামুল হক, আনিসুল হক, আবুল কাসেম, আকতার হোসেন ফিরোজ, মোহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী, সাইফুল আলম মাসুদ গণের নাম লিপি আছে বলে রেকর্ড থেকে জানা যায়। আরো যাঁরা বিদ্যালয়ের দাতা তালিকায় আছেন, তাদের নাম উল্লেখ করতে না পারার ব্যর্থতা লেখকের নিজের।

চলবে..

লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন ছাত্র

২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক) 


আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে